২৩ শতাংশ বাড়লো গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম ও বাড়বে

gas electricity

গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ল। সিএনজি বাদে সব শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। সবচেয়ে বেশি ২৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে সার কারখানার গ্যাসের দাম। ‘ব্যবহার কম’ বলে মিটারভিত্তিক আবাসিক সংযোগের গ্যাসের প্রায় ৪৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১১ টাকা ৯১ পয়সা। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের দামও পরবর্তীতে বৃদ্ধি পাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

দেশে গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ঘাটতি থাকায় বিদেশ থেকে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। সেই আমদানি ব্যয় মেটানো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে বিইআরসি। সংস্থাটির হিসেবে, বছরে প্রায় ৩৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা মূল্যের গ্যাস গ্রহণ করবেন ভোক্তারা। বর্ধিত মূল্যে গ্যাস বিক্রি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিতরণ সংস্থাগুলো আদায় করবে ২৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। বাকি ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে সরকার ভর্তুকি দেবে ৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া গ্রাহকদের আগে দেওয়া অর্থে গঠিত জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর পুঞ্জিভূত মুনাফা থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে।

 

 

ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলছেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে স্থানীয় বাজারে অনেক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় দেশীয় শিল্প পিছিয়ে পড়বে। এরপরও নিরবচ্ছিন্ন এবং স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে রপ্তানিমুখী শিল্পে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, এ মূল্যবৃদ্ধি অযোক্তিক ও অন্যায্য। সরকারি সংস্থগুলোর দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা এবং অপচয়ের কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। একের দায় অন্যের ঘাড়ে পড়ল। বিদ্যমান নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অব্যাহত ধারার মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে এলো।

 

গতকাল রবিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। তিনি বলেন, কমিশন আইনের ৩৪ এর ৬ ধারা অনুযায়ী পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিতরণ এবং সঞ্চালন কোম্পানিগুলো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য গত জানুয়ারির প্রথম দিকে আবেদন করেন। পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ থেকে ২৪ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই শুনানিতে বিইআরসি কারিগরি কমিটি সব ধরনের গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ করে।

 

 

কোন শ্রেণির গ্যাসের দাম কত

 

বর্ধিত মূল্যহার অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের এক চুলার মাসিক বিল ৯২৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা বেড়ে ৯৯০ টাকা হয়েছে। দুই চুলার মাসিক বিল ৯৭৫ টাকা থেকে ১০৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকায়। অর্থাৎ এক চুলায় ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং দুই চুলায় ১০ দশমিক ৭৭ শতাংশ দাম বেড়েছে। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত মিটারভিত্তিক প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। এ শ্রেণির প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে এ শ্রেণির গ্যাসের দাম।

 

বৃহত শিল্প খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি শিল্পের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা হয়েছে। ক্ষুদ্র, কুটির ও অন্যান্য শিল্পে গ্যাসের দাম কমেছে। আগের ১৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা।

 

হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বিপণন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক শ্রেণির গ্রাহকদের ঘনমিটার প্রতি গ্যাসের দাম ২৩ টাকা থেকে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা দিতে হবে। চা-বাগানের গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা হয়েছে। যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম অপরিবর্তিত রেখেছে বিইআরসি।

 

বিদ্যুতের দামও বাড়বে

 

বিদ্যুত্কেন্দ্রে (সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল) ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ২ পয়সা নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। মূল্যবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ৮১ শতাংশ। অন্যদিকে ক্যাপটিভ বিদ্যুতের গ্যাসের দাম ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে এ শ্রেণির গ্যাসের দাম ছিল ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা