বেনাপোলে রাজস্ব আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৮৯ শতাংশ

বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন,এবার রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হয়েছে ৫৫৮কোটি ০৮ লাখ টাকা।২০২১-২০২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫হাজার ১৫৮কোটি টাকা,আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯কোটি ৯২লাখ টাকা।
তবে গতবছরের চেয়ে এবার রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ।২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪হাজার ১৪৫ কোটি ১৪লাখ টাকা।
২০২১-২২ অর্থ বছরে বেনাপোল শুল্ক ভবনের এনবিআরের দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছিল ১হাজার ৬৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা।
তবে বছরের শেষের দিকে রাজস্ব পূরণে শঙ্কা দেখা দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি ৩০জুন অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থেকে যায় ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।এনিয়ে টানা পাঁচ বছর এনবিআরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে বেনাপোল শুল্কভবন।
বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা অবকাঠামোসহ নানা অনিয়মের কারণে রাজস্ব আদায় কমার অভিযোগ করলেও শুল্ক বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা।
শুল্ক বিভাগ বলছে,করোনা মহামারির কারনে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকা এবং শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ, রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য কম আমদানি হওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে।
রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় কারণগুলো সম্পর্কে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন,বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই।খুলনা ও ঢাকা থেকে এসব পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। এতে যেমন প্রচুর সময় অপচয় হয় তেমনি বন্দরে আটকে থাকা পণ্যের গুনগতমান নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।বেনাপোল বন্দরে বিএসটিআই ও বিএসআইরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটিও একটি বড় কারণ বলে মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান এই প্রতিনিধির কাছে বেনাপোল শুল্কভবনে রাজস্ব আয় কম হওয়ার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বেনাপোল কাস্টমসে ‘অন্য’ সমস্যা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক নতুন নতুন আইন তৈরিকরণ,পণ্যের এইচএসকোড পরিবর্তনের নামে ২০০ পারসেন্ট জরিমানা করা,ডাটাসিট বা পূর্বমূল্য না মানা ও পণ্য পরীক্ষণে জটিলতার কারণে একটি পণ্য বন্দর থেকে খালাস নিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে।”
এছাড়া ভারতের বনগাঁ কালীতলায় ‘পার্কিং জটিলতা’ আছে বলেও জানান সিঅ্যান্ডএফ সভাপতি শামছুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশটির সরকারি ওই পার্কিংয়ে প্রবেশের পর বেনাপোলে আসার অপেক্ষায় পণ্যবাহী ট্রাকের সময় লাগে ১৫ দিন থেকে কখনও কখনও দেড় মাসের মত।
“প্রতিদিন যেখানে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বন্দরে ঢোকার কথা, সেখানে জায়গা সংকটের কারণে ঢুকছে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ ট্রাক। ফলে ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো পণ্য খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ দিন।”

‘বন্দরের সক্ষমতা না বাড়ালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সুফল পাওয়া যাবে না’ বলেও মন্তব্য এই ব্যবসায়ীর।
“আমরা বারবার বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিঠি দিলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কর্ণপাত করছেন না।”
বন্দরের সক্ষমতা ও কাস্টমস হয়রানি বন্ধ হলে এই বন্দর থেকে দ্বিগুন রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন শামছুর রহমান।

বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন,দেশে করোনার প্রভাব চলছে দু’বছরের বেশি সময় ধরে। চলতি অর্থ বছরে উচ্চ শুল্কহারের পণ্য কম এসেছে। বন্দরের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সাথে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা বাড়ানোর পক্ষে শুল্ক কর্তৃপক্ষ কাজ করছেন।যারা অনিয়ম করার চেষ্টা করেছেন তাদের জরিমানা,লাইসেন্স বাতিলসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।এসব কারনে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও গত বছরের চেয়ে ৪৫৪কোটি ৯২ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে।