জাতীয় পার্টিতে ফের দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব

জাতীয় পার্টিতে (জাপা) আড়াই দশক ধরে চলা দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্যে এসেছে। আগামী বছরের ভোটে জাপার ভূমিকা কী হবে- তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

 

তাই বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সংঘাতের রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। সরকারকে নিয়ে জি এম কাদেরের সমালোচনা ও রওশন এরশাদের প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা- এ দুটি বিষয় নির্বাচনের আগে জাপায় নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

গত শনিবার রওশন এরশাদের ডাকা মতবিনিময় সভায় যাননি জি এম কাদের ও তাঁর অনুগতরা। পাল্টা হিসেবে রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পাননি তাঁরা। এটি দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বকে প্রকাশ্য করেছে। রওশন দেশে ফিরে প্রকাশ্যেই আক্ষেপ করেছেন, তাঁর অসুস্থতার সময় দলের কেউ খোঁজ নেয়নি। খবর নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর পর রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন জাপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। ফুসফুসের রোগে গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় তিন মাস ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁকে গত ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ড নেওয়া হয়। প্রায় আট মাস পর গত ২৮ জুন ব্যাংকক থেকে ফিরে বাজেট অধিবেশনে অংশ নেন রওশন।

রওশন এরশাদের অসুস্থতা ও দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে জাপায় দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। এই সময়ে দলে কোণঠাসা ও বাদ পড়া নেতারা দেশে ফেরা দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

 

তাঁদের দাবি, জি এম কাদেরের সরকারবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতির কারণে আওয়ামী লীগ রুষ্ট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিকা এবং পরবর্তী সময়ে সরকারের প্রতি সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থন রওশন এরশাদের প্রতি। আগামী নির্বাচনে জি এম কাদের বিকল্প চিন্তা করলে পরিস্থিতি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতোই হবে।

 

সেবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বিএনপিবিহীন নির্বাচন বর্জন করলে একই পদাঙ্ক অনুসরণ করেন তাঁর ভাই জি এম কাদের। তবে রওশন এরশাদ দলের একাংশকে নির্বাচনে নিয়ে যান। জাপা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে জি এম কাদেরপন্থি এক নেতার দাবি, সরকারের সমর্থন জাপার প্রতিই রয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর জাপা মানেই জি এম কাদের।
এদিকে, দেশে ফিরে হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান করা রওশন এরশাদ গত শনিবার সেখানে দলের নেতাদের মতবিনিময় সভায় ডাকেন। জাপার ২৩ এমপিকে তাঁর একান্ত সচিব এম এ রহিম টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানান। জি এম কাদেরকে ফোন করেন রওশন নিজেই। ডাকা হয় জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরও।

কিন্তু দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান ও হাবীবুল্লাহ বেলালী এবং উপদেষ্টা জিয়াউল হক মৃধা ছাড়া অন্যরা রওশনের সভায় যাননি। দলের ২৬ এমপির মধ্যে শুধু রওশনপুত্র সাদ এরশাদ ছিলেন। ছিলেন জি এম কাদের জামানায় পদ হারানো ও অব্যাহতি পাওয়া চার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেছেন, রওশন এরশাদ সবার ঊর্ধ্বে। যদিও দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তাঁর সভা আহ্বানের এখতিয়ার নেই, তবু তাঁর ডাকে সভায় যেতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু সেখানে প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে ছেড়ে দিয়ে বহিস্কার হওয়া ও অব্যাহতিপ্রাপ্তদেরও ডাকা হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে এক সভায় বসতে পারি না। সে কারণেই জি এম কাদেরসহ দলের এমপিরা যাননি। রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সময় চাওয়া হয়েছে। সময় দিলে জি এম কাদেরের নেতৃত্বে এমপি ও দলের নেতারা দেখা করতে যাবেন।

রওশন এরশাদের সভা যখন ওয়েস্টিনে চলছিল, একই সময়ে সব কো-চেয়ারম্যান ও ২১ এমপি জি এম কাদেরের বনানী কার্যালয়ে ছিলেন। রওশনের সভায় যোগ দেওয়া এরশাদের ভগ্নিপতি হাবিবুর রহমান রোববার জি এম কাদেরের সঙ্গে দেখা করেছেন।

রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ সমকালকে বলেছেন, আজ মঙ্গলবার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আবারও ব্যাংকক যাচ্ছেন রওশন এরশাদ। ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। ৩০ বছর তিনি রাজনীতি করছেন। জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান তিনিই বানিয়েছেন। জাপা থেকে যাঁরা এমপি হয়েছেন, রওশন এরশাদের কারণেই হতে পেরেছেন। আবারও এমপি হতে রওশন এরশাদকে লাগবে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ব্যাংককে রওশন এরশাদকে দেখতে না যাওয়া ঠিক হয়নি। তবে রওশন এরশাদ কবে ফিরবেন, তা না জেনেই গত ২৩ জুন তাঁকে দেখতে ব্যাংকক যান জি এম কাদের। ২৮ জুন বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। আবার মঙ্গলবার বিমানবন্দরে বিদায়ও দিতে যাবেন।