আজও ক্রেতা সংকটে গ্রামীণফোন, রবি ছুটছেই

গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর ক্রেতা সংকটে বড় ধরনের দরপতনের মধ্যে পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। অন্যদিকে শূন্য হয়ে পড়েছে ক্রয় আদেশের ঘর। এদিকে, বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোনের শেয়ারহোল্ডারদের কপাল পুড়লেও পোয়াবারো অবস্থা রবির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের।

বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞার পর টানা চার কার্যদিবস গ্রামীণফোনের শেয়ারের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে থাকলো। ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোনের শেয়ারের এমন ক্রেতা সংকট আগে কখনো দেখা যায়নি।

বাজার মূলধনের হিসাবে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় এই কোম্পানির শেয়ারের এমন দরপতনে বিপাকে পড়েছেন কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। অনেকে দিনের সর্বনিম্ন দামে শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন, কিন্তু ক্রেতা না পাওয়ায় তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে প্রতিদিন শেয়ারের দাম কমে ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন তারা।

গ্রামীণফোনের এমন দুর্দিনে হু হু করে বাড়ছে আর এক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবির শেয়ার দাম।

ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সংযোগে গ্রাহকদের ‘মানসম্মত সেবা দিতে না পারার’ কারণ দেখিয়ে গত বুধবার (২৯ জুন) গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বিটিআরসি। এরপর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। অন্যদিকে শূন্য হয়ে যায় ক্রয় আদেশের ঘর।

অন্যদিকে প্রায় ছয় মাস ধরে পতনের ধারায় থাকা রবির শেয়ার এদিন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। গ্রামীণফোনের শেয়ার ক্রেতা সংকট দেখা দিলেও রবির শেয়ারের ক্রেতা বেড়ে যায়। ফলে বাড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম।

এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে রবির শেয়ার দাম বাড়ানোর জন্য গ্রামীণফোনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমন গুঞ্জন ছড়ানোর পর রবির শেয়ারের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা। ফলে বেড়ে যায় রবির শেয়ারের ক্রয় আদেশ।

আর বাজারে ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জন সত্যি হয়ে উঠে চলতি সপ্তাহে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই। রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের সর্বোচ্চ দামে রবির শেয়ার কেনার বিপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ আসে। এতে শুরুতেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায় রবি। যা অব্যাহত থাকে দিনের লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।

অন্যদিকে লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে গ্রামীণফোনের বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। ফলে দিনের সর্বনিম্ন দামে শুরু হয় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।

একই চিত্র দেখা গেছে, সোমবারের লেনদেনেও। এদিন লেনদেন শুরু হতেই গ্রামীণফোনের শেয়ার দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায় ও দিনভর ওই দামেই লেনদেন হয়। অন্যদিকে লেনদেনের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে রবির শেয়ার দাম। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে দিনের লেনদেন দুই ঘণ্টা বাকি থাকতেই দিনের সর্বোচ্চ দামে চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার। লেনদেনের শেষ পর্যায়ে এসে দিনের সর্বোচ্চ দামে কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ আসলেও বিক্রির ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই গ্রামীণফোনের বিপুল পরিমাণ শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দামে বিক্রির আদেশ আসে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এর মাত্রা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৭টি শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন দাম ২৭৭ টাকা করে বিক্রির আদেশ রয়েছে। অন্যদিকে শূন্য পড়ে আছে ক্রয় আদেশের ঘর।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করা রবির শেয়ার দাম মঙ্গলবার লেনদেনের শুরু থেকেই বাড়ছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দাম আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেড়েছে।

২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোন বাজার মূলধনের হিসাবে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। সূচকেও সব থেকে বড় প্রভাব রাখে এ কোম্পানিটি। এর আগে ২০১৯ সালে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায় গ্রামীণফোন। সে সময়ও কোম্পানিটির শেয়ারের বড় দরপতন হয়। তবে শেষ তিন কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার যেভাবে ক্রেতা সংকটে পড়ছে, এর আগে এমন অবস্থায় আর পড়েনি। ক্রেতা সংকটে পড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২০২০ সালের ৭ আগস্টের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।