চার দিনের ব্যবধানে যশোর বিএনপি হারালো তিন নেতাকে

চার দিনের ব্যবধানে যশোর জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হারালো তিন নেতাকে। সংগ্রামী তিন নেতাকে হারিয়ে গভীর শোকাহত যশোর বিএনপির অংগ সংগঠনগুলো। গত মঙ্গলবার ১২ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই শনিবার পর্যন্ত চার দিনের ব্যবধানে হত্যা এবং চিকিৎসাধীন অবস্থা মৃত্যু হয় বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান ধনি, নূর-উন-নবী এবং আব্দুস সাত্তার।

গত মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে যশোর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধনীকে শংকরপুর আকবরের মোড়ে যশোর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরেক বিএনপি নেতা শামীম আহম্মেদ মানুয়ার পরিকল্পনায় কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ছিলেন ৫২ বছর বয়সী বদিউজ্জামান। ঘটনার ৭২ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আাসমীসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আরেক আসামীকে পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৬ যশোর। এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবারে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। নিহত ধনি’র বিরুদ্ধে ২টি হত্যা মামলা, ১টি অস্ত্র মামলা, ১টি সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলা, ও ১টি বিস্ফোরক মামলাসহ মোট ১২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এর একদিন পার হতেনা-হতেই গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) রাত ২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন সদর উপজেলা বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক পৌর কমিশনার নূর-উন-নবী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। নূর-উন-নবীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শুক্রবার এক শোকবার্তা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নূর-উন-নবীর মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন যশোর বিএনপির আরেক নেতা সদর উপজেলার চুরামনকাটির সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী দুই সন্তান সহ অসংখ্য গুনাগ্রহী রেখে গেছে।

আব্দুস সাত্তার তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি। এছাড়া তিনি কোতোয়ালি বিএনপিরও সহ সভাপতি ছিলেন। আব্দুস সাত্তার রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ইকোনোমিক্স এর ছাত্র ছিলেন। অনার্স ও মাস্টার্স তিনি সেখানে শেষ করেছেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি বিএনপিতেই রাজনীতি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার ইউনিয়নের খিটিবদিয়া গ্রামে। তিনি যশোর শহরের ঘোপ এলাকায় থাকতেন।
তিন নেতার মৃত্যুতে বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্যে ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, আহবায়ক কমিটির সদস্য গোলাম রেজা দুলু, মিজানুর রহমান খান.জেলা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি আশরাফুল কবির সুমন সহ অনান্য নেতারা পরিবারের প্রতি গভীর শোক সমবেদনা জানান। সেই সাথে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান ধনি হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত শাহ এ সকল বিষয়ে গ্রামের কন্ঠ কে বলেন,

‘প্রকৃতি শূন্যতা পছন্দ করে না। যে সকল নেতারা মারা গিয়েছে তারা প্রত্যেকে অনেক ত্যাগস্বীকার করেছেন এই দলের প্রতি। তাদের এই নেতৃত্ব পূরণ হবার নয়। এ সকল নেতারা মারা যাওয়ার কারণে মানসিকভাবে আমরা বিপর্যস্ত রয়েছি। তবে সময়ের ব্যবধানে সবকিছুই পূরণ হবে। কিন্তু এ সকল নেতাদের নেতৃত্ব, ত্যাগ এবং তিতিক্ষা এটি আর ফিরে পাওয়ার নয়।#