যশোরে শিক্ষা অফিসের গুদাম থেকে সরকারি বই বিক্রির ঘটনায় শোকজ

abhaynagar jessore map
অভয়নগর যশোর

যশোর অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গুদাম থেকে সরকারি বই লোপাটের ঘটনায় শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারি খালিদ হাসানকে শোকজ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। গত মঙ্গলবার তাকে এ শোকজের চিঠি দেয়া হয়েছে এবং আগামি তিনদিনের মধ্যে খালিদ হাসানকে শোকজের লিখিত জবাব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বই পাচার হওয়া ভ্যান চালক এবং পাচারের সাথে জড়িত জনৈক বাবুল খান বই পাচারের সাথে জড়িত বলে খালিদ হাসানের নাম প্রকাশ করায় এবং পাচারকারী বাবুল খানের সাথে ঘটনার আগে একাধিকবার কথা হওয়ার কারন দর্শানো হয়েছে।

আগামী তিনদিনের মধ্যে এসকল কারন ব্যাখা করে তাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। লিখিত জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন। এক প্রশ্নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর সাড়ে তিন চার লাখ নতুন বই আসে। সেখান থেকে মাত্র ৩শ’ ২৮ পিস বই পাচার হচ্ছিল। যা স্টক মেলানো কোন অফিসের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় বিশেষ কারনে দুই দশ সেট বই অনেককে দিতে হয়। যে কারনে স্টক মেলানো আদৌ সম্ভব হয়না। এদিকে অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গুদাম থেকে চলতি শিক্ষা বর্ষের বই পাচারের ঘটনায় অফিস সহকারি খালিদের নাম আসার পর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছরে নবম শ্রেণির যে বিজ্ঞান বই দেওয়া হয়েছে তা ২০১৯,২০২০ এবং ২০২১ সালের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খোদ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছেন, খালিদ হাসান চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও তার চালচলন অফিসের সেকেন্ড বসের মতো। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও তাকে সমিহ করে চলেন। এবং তিনি শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার কথা বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফায়দা লুটে আসছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সূত্রটি দাবি করেছেন, ইতিপূর্বেও গুদাম থেকে বিভিন্ন বই গোপনে পাচার করেছেন খালিদ হাসান। এদিকে অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গুদাম থেকে গোপনে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ৯ম শ্রেনির ৩শ’ ১৮ পিস বই গোপনে বিক্রির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা দপ্তরে। নড়ে চড়ে বসেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

তিনি গোপনে বই বিক্রির চেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার ঘোষণা দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জব্দকৃত বইগুলো বর্তমানে অভয়নগর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে বই পাচারকারী বাবুল খানের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। রবিবার রাতে তাকে ছেড়ে দেয়ার পর থেকে সে লাপাত্তা হয়েছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্রের আশংকা ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬ টা ১৩ মিনিট থেকে ৬ টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত খালিদের ব্যবহৃত নম্বরের সাথে বাবুল খানের নম্বর হতে ৫ বার কথা হওয়ার তথ্যও মোবাইল থেকে মুছে ফেলতে পারে। এ কারনে খালিদ হাসানের কললিস্ট যাচাই করার দাবি করেছেন সূত্রটি। এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা আক্তার বলেন, ঘটনাটি যেহেতু শিক্ষা অফিসের সেহেতু জেলা শিক্ষা অফিস এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে। বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম আজমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঘটনাটি তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনেছেন। তবে খালিদ হাসানের প্রসংগটি তাকে প্রথমে জানানো হয়নি। পরে জানতে পেরে তিনি খালিদ হাসানকে শোকজ করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এক প্রশ্নে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, আমার দপ্তর থেকে কোন বই চাওয়া হয়নি। তবে বইগুলো স্ব-স্ব শিক্ষা অফিসের গুদামে সংরক্ষনের নির্দেশনা দেয়াছিলো। বন্যা কবলিত অঞ্চলে বইয়ের ঘাটতি পড়লে এগুলো থেকে পূরণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রসংগক্রমে তিনি আরও বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তিনি তার বইয়ের স্টক মিলিয়ে দেখে জানাতে বলেছিলেন। উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের গুদাম হতে অফিস সহকারি খালিদ হাসান বাবলু খান নামে জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০২২ শিক্ষা বর্ষের নবম শ্রেণির ৩১৮ পিস বই গোপনে বিক্রি করে দেয়। বই নিয়ে যাওয়ারসময় স্থানীয় জনতা ভ্যান বোঝাই বইসহ বাবুল খানকে ধরে ফেলে। পরে ঘটনাটি নিয়ে ৪/৫ ঘন্টার নাটকিয়তার পর বাবুল খানকে ছেড়ে দিয়ে একটি জিডি করে অভয়নগর থানা হেফাজতে বইগুলো রাখা হয়।#