কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি দুই বিলিয়ন ছাড়াল

dollar

বাজারে সংকট মেটাতে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল কয়েকটি ব্যাংকের কাছে আরও ৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে গতকাল পর্যন্ত বিক্রি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ১ মাস ২৪ দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি করেছে ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন বা ২০৪ কোটি ডলার। এর আগে গত অর্থবছরে ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বাজারে বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলার বিক্রির প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে গতকাল ৩৯ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। গত অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। অথচ এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত থাকা ৭৯৩ কোটি ডলার কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে তখন বাজারে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গত বছরের আগস্টে সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়ায়। কিন্তু পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স কমতে থাকায় ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে গত ১২ জুলাই প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে।

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়োজিত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদার চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী ব্যাংকের বিদায়ী এমডি আতাউর রহমান প্রধান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যে বাজার ইতিবাচক ধারায় এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাফেদা যেসব উদ্যোগ নিয়েছে; যথাযথভাবে তা কার্যকর করতে পারলে আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠে যাওয়ার এ সময়ে আবার সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে। গত জুন শেষে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। আবার সরকার গত অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর প্রভাবে আন্তঃব্যাংকে স্বল্প সময়ের ধার বেড়েছে। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ধারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও প্রচুর ধার করছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য ব্যাপক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গত অর্থবছর আমদানি ব্যয় প্রায় ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলারে পৌঁছে। একই সময়ে রপ্তানি ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। আবার রেমিট্যান্স ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারে নেমেছে। ফলে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বেশ কিছু পণ্যে শতভাগ ও ৭৫ শতাংশ এলসি মার্জিন নির্ধারণ করে তাতে ঋণ বন্ধ করা হয়েছে। ৩০ লাখ ডলারের বেশি এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আমদানি পর্যায়ে ১১২ টাকায় উঠে যাওয়া ডলারের দর এখন ১০৪ থেকে ১০৮ টাকায় নেমেছে। খোলাবাজারে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায়। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রপ্তানি আয় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ৩৯৮ কোটি ডলার হয়েছে। প্রথম মাসে রেমিট্যান্সও প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে ২১০ কোটি ডলার দেশে এসেছে। চলতি মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ১২৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।