উপসচিব রিভা শাহরিয়ার চাকরিচ্যুত

gov logo

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) রিভা শাহরিয়ারকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়নের’ অভিযোগে তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, রিভা প্রায় পাঁচ বছর আগে যুক্তরাজ্যে যান। এরপর একাধিকবার ছুটিতে যাওয়ার পর আর কাজে যোগ দেননি।

এদিকে ‘অসদাচরণের’ দায়ে আরেক উপসচিব, বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামানকে ‘তিরস্কার’-এর দণ্ড দিয়েছে সরকার। আছাদুজ্জামানের প্রয়াত পিতা আমির হামজা স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। জীবিতকালে জেলখাটা আসামি আমির হামজাকে মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।

রিভা শাহরিয়ার ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ছুটি ভোগরত অবস্থায় বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি এবং রিভার সন্তানের চিকিৎসার জন্য বিশেষ বিবেচনায় ‘অসাধারণ’ ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে ২০২০ সালের ১০ জুন থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে তাঁর আর ছুটি বাড়ানো হবে না এবং আবশ্যিকভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার শর্তও দেওয়া হয়েছিল। এ ছুটি মঞ্জুর করার পরও তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেননি। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী রিভার বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। প্রথমে তাঁকে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী চাকরি থেকে বরখাস্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত রিভাকে জানিয়ে চলতি বছরের ১৯ মে তাঁকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বারের কারণ দর্শানোর জবাব পর্যালোচনা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁকে গুরুদণ্ড হিসেবে ‘বাধ্যতামূলক অবসর’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ চাওয়া হলে কমিশনের পক্ষ থেকে সায় পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিভার একজন ব্যাচম্যাট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে রিভাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চাচ্ছিল, তিনি যেন কিছু দিনের জন্য হলেও চাকরিতে যোগ দেন। তাঁকে বারবার ছুটি দিলে সেটা অন্যদের জন্য বড় উদাহরণ হয়ে যাবে। কিন্তু রিভা সন্তানের অসুস্থতার কারণে তা করতে পারছিলেন না। এ কারণে মন্ত্রণালয় তাঁর ছুটি আর বাড়াতে রাজি হয়নি। অন্য একটি সূত্র জানায়, রিভার স্বামীও বাংলাদেশে ভালো চাকরিতে ছিলেন। তিনিও চাকরি ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে গেছেন। রিভা জনপ্রশাসনের শুনানিতেও ঠিক সময়ে হাজির হয়নি। তাই তাঁর বারবার ছুটির মেয়াদ বাড়ানো বা অন্য কোথাও পোস্টিংয়ের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ ছিল না।

 

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রিভা গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর বিষয়ে নির্ধারিত শুনানির তারিখে উপস্থিত ছিলেন না। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে ভিসা-পাসপোর্ট সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করার জন্য চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভাগীয় মামলার শুনানি স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রিভার সব আবেদন পর্যালোচনা করে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহমদকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করলে, সেটিতে পিএসসিও একমত পোষণ করে। এর পর সেটা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতিও এতে সম্মতি দিলে রিভা শাহরিয়ারকে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়।

 

 

উপসচিবকে তিরস্কার :অসদাচরণের দায়ে উপসচিব মো. আছাদুজ্জামানকে ‘তিরস্কার’-এর লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আছাদুজ্জামানের প্রয়াত পিতা আমির হামজা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। জীবিতকালে জেলখাটা আসামি আমির হামজাকে মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে সন্তান হিসেবে আছাদুজ্জামান তথ্য গোপন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলায় ব্যক্তিগত শুনানিতে আছাদুজ্জামান আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, স্বাধীনতা পুরস্কারের মনোনয়ন ফরমে মামলা সংক্রান্ত তথ্য না চাওয়ায় সেটা বাদ পড়েছে। কিন্তু তার এ যুক্তি সার্বিক পর্যালোচনায় গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।