নতুন জোয়ার শেয়ারবাজারে

নতুন জোয়ার এসেছে শেয়ারবাজারে। অথচ এক মাস আগে গত ৩১ জুলাই দরপতন ঠেকাতে সব শেয়ারের দরে ‘ফ্লোর প্রাইস’ আরোপ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর এক মাস পর অধিকাংশ শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যে বেশ কিছু শেয়ারের দর হু হু করে বাড়ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া এক মাসেই দ্বিগুণ হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

ক্রমাগত দর বাড়তে দেখে এক সময়ের নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে বিনিয়োগে সক্রিয় হচ্ছেন। এতে ক্রমাগত বাড়ছে বাজার মূল্য সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ।

গত ১৪ আগষ্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বশেষ ১১ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৮৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬৪৩২ পয়েন্ট ছাড়িয়েছিল। সূচক বৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০দিনই সূচক বেড়েছিল।

আজ বুধবারও টানা পঞ্চম দিনে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় আছে শেয়ারাবাজার সূচক।

সকাল সাড়ে ১০টায় দিনের লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা পর ডিএসইতে ২২৩ কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৭৪টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হচ্ছিল। অপরিবর্তিত অবস্থায় বা ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হতে দেখা যায় ৭৩ শেয়ার।

এ সময় সূচক গতকালের তুলনায় ৪০ পয়েন্ট বেড়ে ৬৪৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। এ নিয়ে গত ১২ কার্যদিবসে সূচক বাড়ল ৩২৫ পয়েন্ট বা সোয়া ৫ শতাংশ।

লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় ৫৬৪ কোটি ০৯ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়।

অথচ এক মাস আগেই টানা দরপতন ঠেকাতে কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস বা কোন শেয়ার সর্বনিম্ন কোন দরে কেনাবেচা হতে পারবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পুরো উল্টো চিত্র শেয়ারবাজারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ না থাকলেও গত এক মাসে বেশ কিছু শেয়ারের দর দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন করে শেয়ারবাজারে এ জোয়ার আনার নেপথ্যে ব্যক্তি শ্রেণির বড় কিছু বিনিয়োগকারীর নতুন সংযোগ আছে বলে জানান বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।

তাছাড়া ডলারের বাজারের অস্থিরতার পাশাপাশি টাকার মূল্য মান কমার কারণে রিকন্ডিশন গাড়িসহ কিছু ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। এমন কিছু ব্যবসায়িদের বড় অঙ্কের টাকা শেয়ারবাজারে গত কয়েক সপ্তাহে লগ্নি হয়েছে। সাম্প্রতিক দরবৃদ্ধির নেপথ্যে এরও বড় ভূমিকা আছে। এর বাইরে কারসাজিও হচ্ছে ব্যাপক। এমনকি বেশ কয়েকটি কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিকপক্ষের সংশ্লিষ্টতার খবর পাচ্ছেন বলে জানান কয়েকটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা।

দরবৃদ্ধিকে উস্কে দিতে চাওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও কারসাজির ঘটনা দেখেও নিশ্চুপ আছে। এ সুযোগে এ বাজারের নতুন ও পুরনো সব জুয়াড়ি চক্র সক্রিয় হয়েছে।

আজ লেনদেনের প্রথম ঘণ্টা শেষে অন্তত ১৭ কোম্পানির শেয়ার ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে কেনাবেচা হতে দেখা যায়। প্রায় ১০ শতাংশ দর বেড়ে দরবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বসুন্ধরা পেপার এবং ইস্টার্ন হাউজিং। এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার এক সপ্তাহ আগেও ৫০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। আজ তার তুলনায় ৩০ শতাংশ দর বেড়ে ৬৬ টাকা ৩০ পয়সায় কেনাবেচা হচ্ছে।

আর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারদর এক মাস আগেও ৫২ টাকা দরেও কেনাবেচা হয়েছিল। এক মাস আগের তুলনায় ৮৫ শতাংশ দর বেড়ে আজ ৯৬ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের দর সর্বাধিক ৪৪ শতাংশ বেড়েছে।

একই হারে দর বেড়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন। আজ শেয়ারটি ২৮৮ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। মাত্র দুই মাস আগেও এ শেয়ারটি ৮০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছিল। অর্থাৎ দুই মাসে সাড়ে তিনগুণে উন্নীত হয়েছে।