ধীরগতিতে কাটছে অর্থনীতির চাপ

dollar

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী অর্থনৈতিক সংস্থা, বিশ্লেষক ও জার্নালের ভাষ্যমতে ২০১১-২০২০ সাল- এ এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি ছিল ধাবমান ঘোড়ার মতো। বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু তো একে এশিয়ার টাইগার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। একই অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন সে-সময়কার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনা। ওই এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় পরিবর্তনও ঘটে।

মানুষের আয় বাড়ে। দারিদ্র্য বিমোচন ঘটে দ্রুতগতিতে। সব ধরনের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ে কয়েক গুণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে।

 

কিন্তু করোনা মহামারির আঘাত সে গতি অনেকটা থামিয়ে দেয়। অবশ্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপে করোনার ধাক্কা ভালোভাবেই সামলে নেয়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয়। বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিও চাপে পড়ে।

সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই চলে যায় নেতিবাচক ধারায়। তবে এর মধ্যেও আছে আশার বাণী। কয়েক মাসের ব্যবধানেই সব চাপ আস্তে আস্তে সামলে উঠছে দেশের অর্থনীতি।

সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে এ খাতের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই সফল হয়েছে সরকার।

ঘুরে দাঁড়িয়েছে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাত। ডলারের বাজারেও কিছুটা নিম্নমুখিতা। তবে খোলা বাজারে ডলারের রেট এখনো ১০৭ টাকা। একে আরও কমিয়ে আনা জরুরি মনে করেন বিশ্লেষকরা।

আমদানির লাগাম টেনে ধরায় আমদানি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নিম্নমুখিতা দেখা দিয়েছে। সবশেষ বুধবার আমদানি ব্যয়ের দায় পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। তবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির ইতিবাচক ধারা এবং আমদানি ব্যয় নমনীয় হওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ কমেছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় সব ধরনের পণ্যমূল্য বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধেরও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। জীবনযাত্রায় অস্বস্তি বাড়াচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। চোখ রাঙাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান চলতি মাসেও মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিবিএসের তথ্যমতে, জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আগস্টের মূল্যস্ফীতি এখনো প্রকাশ হয়নি। সেপ্টেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ওপরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।

 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। এটা বেশ স্বস্তিদায়ক। তবে মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে হবে যে-কোনো উপায়ে। এর জন্য জিনিসপত্রের দাম যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যদিও এটা এখন খুবই কঠিন কাজ। কেননা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বহুমুখী প্রভাবে ইতোমধ্যে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে পরিবহন খরচ ও উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ’ তার পরও বাজারে কঠোর নজরদারি করতে পারলে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।