এসএসসির প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ৩ শিক্ষক আটক

 

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিবসহ তিন শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে মামলা দায়ের করেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরী।

এ ঘটনায় পুলিশের হাতে আটকরা হলেন- উপজেলার নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক যোবায়ের হোসেন ও রাসেল মিয়া।

অভিযোগের পর মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম ভূরুঙ্গামারী থানা ও ইউএনও কার্যালয়ে চার ঘণ্টার রুদ্ধদার বৈঠক শেষে এ মামলা করা হয়।

 

তবে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে বাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও যার গাফিলতিতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরী মামলার বাদী হয়েছেন।

 

জানা গেছে, চলতি এসএসসি পরীক্ষার শুরুর দিনে ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য প্যাকেট করা বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নের প্যাকেটে ভরে বাংলা দ্বিতীয় পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ইংরেজি প্রথম পত্রের প্রশ্নের সঙ্গে বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র বের করে নেওয়া হয় থানার লকার থেকে। এসব প্রশ্ন পরীক্ষার আগে হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিতো অভিযুক্ত শিক্ষকরা। হাতে লেখা প্রশ্নপত্র ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেইলেও শিক্ষার্থীরা পেয়ে যেত টাকার বিনিময়ে।

 

বিষয়টি বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার দিন প্রকাশ পেলে স্থানীয় প্রশাসন ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ইংরেজি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্থানীয় অনেকের নজরে আসলে অনেকটা বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেন কেন্দ্রের ট্যাগ কর্মকর্তা।

 

এ অভিযোগের সূত্র ধরে মঙ্গলবার বিকেলে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনেন। পরে নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক যোবায়ের হোসেন ও রাসেল মিয়াকে আটক করে ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশ।

 

অভিযোগের পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ভূরুঙ্গামারীতে সরেজমিনে আসেন দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলামসহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। প্রথমে তারা ভূরুঙ্গামারী থানা ও ভূরুঙ্গামারী ইউএনও কার্যালয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। সেখান থেকে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান থানায় গিয়ে শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আবারও ইউএনও কার্যালয়ে রুদ্ধদার বৈঠকে যান। বৈঠকের সময় ইউএনও কার্যালয় ও থানা কার্যালয়ের মূল ফটক তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। চার ঘণ্টার বৈঠক শেষ রাত ১২টার পরে বের হন তারা।

 

এ সময় কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষারত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়িতে উঠে স্থান ত্যাগ করেন বৈঠককারী কর্মকর্তাগণ। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা নিরুত্তর থেকে সটকে পড়ে চেষ্টা করেন।

 

পরে ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোরশেদুল আলম জানান, এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনজনকে আটক করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি।

 

তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলমান। এখনি অনেক কিছু বলা যাচ্ছে না। মামলা হয়ে গেলে সব জানানো হবে।

 

এদিকে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, থানার লকার থেকে প্রশ্নপত্র বের করতে হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরে। কয় প্যাকেট প্রশ্ন বের হলো এটা তিনি জানবেন। তাকে প্রথমে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেও মামলায় তাকে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও স্থানীয় কিছু শিক্ষক মনে করেন।

 

অন্যদিকে কেন্দ্রে যাওয়া প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা হয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসারের সামনে। বেশি বা কম প্যাকেট প্রশ্ন গেলে সেটা তিনি অবস্যই জানতেন। এ কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে তারও সম্পৃক্ততা থাকা স্বাভাবিক। কারণ তিনি উপস্থিত থেকে সব প্যাকেট খুলেছেন। তার নামে এমন অভিযোগ থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা মৎস্য অফিসার আদম মালিক চৌধুরীকে মামলার বাদী করা হয়েছে।

 

এদিন বিজ্ঞান বিভাগের প্রশ্নপত্রের তিনটি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। যদিও মামলা তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি পুলিশ।

 

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তার দায় থাকলেও তাদের বাঁচিয়ে মামলা করায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, এ সবের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। যারা প্রশ্ন নিয়ে গেছে তারা জানে।

 

বৈঠক থেকে ফেরার পর কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান, এ বিষয়টি যা সিদ্ধান্ত হয়েছে আপনারা বোর্ডের নোটিশে জানতে পারবেন।