শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নত দেশের পথে বাংলাদেশ

রাজনৈতিক জীবনের সুদীর্ঘ পথ চলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দুরদর্শি ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের পথে।

বুধবার(২৮ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬ তম জন্ম দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যোষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই শুরু হয় শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথ চলা।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম শেখ হাসিনা ছাত্র জীবন থেকেই দেশে ঐতিয্যবাহি সংগঠন ছাত্র লীগের মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ছিলো তাঁর স্বক্রীয় পদচারণা। ছাত্র লীগ থেকে তিনি ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহ-সভাপতি(ভিপি) ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি চার বার প্রধানমন্ত্রী এবং তিন বার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাপশি তিনি ৪২ বছর ধরে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও দক্ষতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ ডিজিটালাইজেশন এবং উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। যুযোপোযোগি ও সুদুর প্রসারি বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিনি দেশকে এগিয়ে যাচ্ছেন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদশের পথে।

এই দীর্ঘ রাজনৈতি পথ পরিক্রমায় এবং দেশকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, চড়াউ-উৎড়াই পার হতে এমনকি বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। বোমা, গুলি, গ্রেনেড তাকে বার বার তাড়িত করেছে। কারা নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছে তাকে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শেখ হাসিনাকে কখনও সামরিক, স্বৈরশাসন, কখনও সাম্প্রদায়িকতা আবার কখনও সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর এ সংগ্রাম অব্যাহত আছে। পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘেসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কৃত হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে। ছোট বেলা থেকেই জেলখানায় বাবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগের সময় তখন অনেক রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের খোঁজ খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌছে দিয়েছেন এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা এনে পৌছে দিয়েছেন দলের নেতাদের কাছে। এভাবেই শুরু হয় তার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে ৬ দফা ও পরে ১১-দফা আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী দেশী-বিদেশী চক্র বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর সপরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করে। তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেশের বাইরে বেলজিয়ামে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর নির্বাসিত অবস্থায়ই শেখ হাসিনার উপর দায়িত্ব আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেও এবং তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সফল দুরদর্শি নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ টানা তিন বার এবং সব মিলিয়ে চার বার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। তিনিও ট্নাা তিন বারসহ মোট চার বারের সফল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রণ্ট থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কারাবন্দি বাবা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতক চক্রের হাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর শেখ হাসিনা বেলজিয়াম থেকে জার্মানি আসেন। পরে জার্মানি থেকে ভারতে এসে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি ভারত থেকে দেশে ফেরেন। এর আগে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের সভাপতি করা হয়। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার আরেক চ্যালেঞ্জিং জীবন। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার তিনি শত্রুর আক্রমণের শিকার হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তাকে হত্যার জন্য ভয়াবহ গ্রেণেড হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি মিথ্যা মামলায় কারানির্যাতন ভোগ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সফলতার পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রপরিচালনায়ও হন। সফলতার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা পুরস্কার ও সম্মানসুচক ডিগ্রীতে ভুষিত হন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন তিনি। গত বছর তিনি এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কাার পেয়েছে। জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউসনস নেটওয়ার্ক(এসডিএসএন) শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কারটি দেয়। দারিদ্র্য দুরিকরণ, বিশে^র সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনিন আহ্বানে সারা দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার তাকে শেখ হাসিনাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি গত ২০১৯ জাতিসংঘে মর্যাদাপূর্ণ ‘‘ভ্যাকসিন হিরো” পুরস্কার পেয়েছে এবং তারুণ্যের দক্ষতা উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা(ইউনিসেফ) শেখ হাসিনাকে ’চাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সন্মাননা দিয়েছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্ব্চ্েচা পুরস্কার “চ্যাম্পিয়ন অব দ্য” এ ভুষিত হন তিনি।