আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন তৃণমূলে বেড়েছে ব্যস্ততা

a.lig-logo

 

জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতারা। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চলছে জেলা, উপজেলা, পৌর এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়নের সম্মেলন। ঘোষণা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও।

 

শুরু হয়েছে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন প্রক্রিয়াও। একই সঙ্গে চলছে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের কাজও। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নেতারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকবেন। ওই বৈঠকেই ২২তম সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি সফর শেষ করে দেশে ফিরলে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকবেন। সেই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ও সার্বিক প্রস্তুতির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যখন সময় দেবেন, তখনই সম্মেলন হবে। নির্দেশনা পেলে আমরাও বসব, আলোচনা করব। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এ বিষয়গুলো নিয়েও কাজ চলছে।

 

গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র তৈরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে নেত্রী (শেখ হাসিনা) একটা কমিটি করে দেবেন। তখন আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে। এখন আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজগুলো করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের ঘোষণাপত্রে কী কী অঙ্গীকার ছিল, এর মধ্যে আমরা কী কী পূরণ করেছি, এগুলো আমরা পর্যালোচনা করছি। যেগুলো অর্জিত হয়ে গেছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। নতুন করে আমাদের আরও রাজনৈতিক অঙ্গীকার যুক্ত করব।

 

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। দলটির গঠনতন্ত্রের অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাসময়েই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন দ্রুত করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। তার নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজও করছেন। তবে মাঝখানে করোনার জন্য এই কাজ বেশ কয়েকবার বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া মাঝখানে ছিল জাতীয় শোকের মাস আগস্ট। ফলে এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। ডিসেম্বেরের মধ্যে সব কাজ শেষ করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির সামনে।

 

তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানো : সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা এবং সাড়ে ছয়শর মতো উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে গত জাতীয় সম্মেলনের আগে এবং সম্মেলনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৬ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলে এখনো ৩২টি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। একমাত্র রাজশাহী বিভাগে সবগুলো জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয়েছে। উপজেলা ও পৌর কমিটিগুলোর সম্মেলনও শেষের দিকে। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে ঢাকা বিভাগের। তবে বর্তমানে তৃণমূল সম্মেলনে বেশ গতি ফিরেছে। গত সপ্তাহেও দুটি জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নেত্রীর নির্দেশনায় জাতীয় সম্মেলনের আগে আমরা তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানোর কাজ করছি। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সবগুলো জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। উপজেলাগুলোর সম্মেলনও শেষের দিকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

 

সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন : আওয়ামী লীগের নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে জাতীয় সম্মেলন আয়োজনে প্রস্তুতি শুরু করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগ। নিজেরা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের দপ্তরে চিঠি দিয়ে প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে তারা। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে সম্মেলন করবে সংগঠন দুটি। তবে উলটো চিত্র ছাত্রলীগে। আওয়ামী লীগের নির্দেশনা পাত্তাই দিচ্ছে না ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি। চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সম্মেলনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেননি সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। বরং তারা এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই এ তিন সংগঠনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ সব সংগঠনের সম্মেলন করতে চান তারা।

 

গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র তৈরি : সম্মেলন ও দল গোছানোর পাশাপাশি সম্মেলনের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের কাজও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি ছিল ৪০ সদস্যের। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছিল ৮১ সদস্যের। এর মধ্যে সভাপতি, সভাপতিমণ্ডলীর ১৭ জন সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর ২৪ জন, কোষাধ্যক্ষ ও ২৮ জন নির্বাহী সংসদের সদস্য রয়েছেন। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান অবস্থায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃঢ় করতেই কার্যনির্বাহী কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্ব বণ্টনের কাঠামোতে প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রতি দুটি বিভাগের জন্য একজন করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। এছাড়া চারজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুটি করে বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রস্তাবিত ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ বিভাগ গঠিত হলে দেশে বিভাগ সংখ্যা হবে ১০টি। সেক্ষেত্রে আরও দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হতে পারে। জানতে চাইলে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা যুগান্তরকে বলেন, নেত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি করে দেওয়ার পর এই বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হবে।

 

এছাড়া জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় সম্মেলনের এই প্রস্তুতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সামনে আরও বেশি কিছু কাজ রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলর তালিকা লাগবে। যার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা শাখায় সম্মেলন করে জেলা ইউনিটের কমিটি করতে হবে। দীর্ঘদিন টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটানোর বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি ইতোমধ্যে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ বলছে, বিরোধীদের মাঠ দখলের সুযোগ দেবে না তারা। অন্যদিকে দল ও সরকারের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ বিষয়েও সজাগ থাকবে দলটি। সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কাজের ব্যস্ততা।