চিত্রা নদীর পাড়ে গ্রামীণ উৎসবে মেতেছেন গ্রামবাসী

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় পর গ্রামীণ উৎসবে মেতেছেন গ্রামবাসী। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে নির্মল বিনোদন দিতে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করেন যুব ও তরুণসমাজ। পাশাপাশি বর্তমান প্রজন্মকে মোবাইল ফোন ও মাদকাসক্তি থেকে দুরে রাখতেও এ ধরণের উদ্যোগ বলে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। খড়রিয়া সমবায় ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দিনব্যাপী নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খড়রিয়া গ্রামে চিত্রা নদীর মনোরম পরিবেশে বিভিন্ন ধরণের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে তৈলাক্ত কলাগাছে উঠা, শতাধিক নারীর অংশগ্রহণে ঝুড়িতে বলনিক্ষেপ ও হাতে হাতে ফুটবল বদল, পুরুষদের চোখ বেঁধে হাঁসধরা এবং স্লো বা কমগতির মোটরসাইকেল চালানো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে অনেক চেষ্টা করেও কেউ কলাগাছের উপরিভাগে উঠতে পারেননি।

খড়রিয়া সমবায় ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দুই বছরের বেশি সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের পাশাপাশি প্রায় সব ধরণের খেলাধুলাও বন্ধ ছিল। এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অনেকটা অমনোযোগী হয়ে পড়েন। খেলার পরিবেশ হারিয়ে শিক্ষার্থী ও যুবসমাজসহ অনেকে মোবাইল ফোনে গেমস, ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি হয়ে পড়েন। সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে খড়রিয়া গ্রামে চিত্রা নদীর মনোরম পরিবেশে এ ধরণের গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে নির্মল বিনোদন দিতে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ছিল। খেলাধুলা ছাড়াও আমরা সবসময় মানবিক কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি।

ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক তুহিন হোসেন লস্কর বলেন, মোবাইল ফোনে গেমস আসক্তিসহ তথ্য প্রযুক্তির ভিড়ে গ্রামের ঐহিত্যবাহী অনেক খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সব খেলা বাঁচিয়ে রাখতে শুক্রবার দিনব্যাপী গ্রামীণ আনন্দ-উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতেও এ ধরণের আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই। এছাড়া ফাউন্ডেশনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষে কেককাটা ও বিনামূল্যে র‌্যাফেল ড্র আয়োজনের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ১৮৪টি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

খেলায় অংশগ্রহনকারী খড়রিয়া গ্রামের ইউসুফ মোল্যা, নুরনাহার, নাজমিন আকতার, সুমি আকতার, আবু তাহের, হাসান শাহারিয়া, তাপস কুমার বোসসহ অনেকে জানান, কলাগাছে উঠা প্রতিযোগিতা যেমন কষ্টের, তেমনি আনন্দদায়ক। এছাড়া বয়স্ক পুরুষদের অংশগ্রহণে মাঠের মধ্য থেকে হাঁসধরা প্রতিযোগতাও বেশ আকর্ষণীয় ছিল। অন্যদিকে কিশোরীসহ নানা বয়সী নারীদের অংশগ্রহণে ঝুড়িতে বলনিক্ষেপ ও হাতে হাতে ফুটবল বদল অনুষ্ঠানটি অনেক মজার হয়েছে।

খড়রিয়া গ্রামের মানিক মোল্যা বলেন, আমাদের ছেলেরা অসাধারণ সব আয়োজন করেছে। আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে সব খেলা সবাই উপভোগ করেছেন। বিনামূল্যে র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠানে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ২৪ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন বিজয়ী হয়েছি। অন্যরাও বিভিন্ন ধরণের পুরস্কার পেয়েছেন।

খড়রিয়া সমবায় ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা তাহাজ্জত হোসেন টুকু মোল্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-ফাউন্ডেশনের সভাপতি সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তুহিন হোসেন লস্কর, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান শাহারিয়া, প্রচার সম্পাদক জর্ডান প্রবাসী শাহিন হোসেন মল্লিক, ক্রীড়া সম্পাদক মালয়েশিয়া প্রবাসী সবুজ মোল্যা, সদস্য মালয়েশিয়া প্রবাসী হাকিম, তুফান হোসেন মোল্যা, নাজিম হোসেন ডাবলু তরিকুল ইসলাম, নাজমুল শিকদারসহ অনেকে।