দুদিন আগেই রংপুরে নেতাকর্মীরা, শুক্রবার সমাবেশস্থলে ভিড়

আগামীকাল শনিবার রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। বিভাগের ৮ জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। পুলিশি হয়রানিসহ পরিবহন ধর্মঘটের আগের দিনই অনেক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা রংপুরে চলে এসেছেন। উত্তরের সীমান্ত জেলার নেতাকর্মীরা ধর্মঘটের কারণে রংপুরে ঢুকতে না পেরে খোলা মাঠে ত্রিপল টাঙিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন। এদিকে সময় বাড়ার সাথে সাথে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে লোক সমাগম বাড়তে শুরু করেছে। রংপুর মোটর মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রেন, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল এমনকি পায়ে হেঁটেও সমাবেশ মাঠে উপস্থিত হয়েছেন তারা।

পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিভাগের ৮ জেলা থেকে রংপুরে ঢুকে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে। পরিবহন ধর্মঘট চলায় নিরাপত্তার কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবহন মালিকেরা বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস ভাড়া দিচ্ছেন না। আয়োজকেরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে কালেক্টরেট মাঠে এসে সমাবেশকে সফল করতে তৃণমূলের নেতারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

পঞ্চগড় বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু ও সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেন ও শুক্রবার সকালে ট্রেনে করে পঞ্চগড় বিএনপির কয়েক হাজার নেতাকর্মী রংপুরের সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। এছাড়া শুক্রবার রাতের ট্রেনে করে এবং কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে করে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল জানান, ধর্মঘটের খবর জানার পরপরই বৃহস্পতিবার পাঁচ থেকে সাত হাজার নেতাকর্মী ট্রেন ও বাসে করে রংপুরে পৌঁছেছেন। এরা রংপুরের মেট্রো এলাকার হাজিরহাট রেডিও সেন্টারের পাশে উত্তম স্কুলের মাঠে ত্রিপল টাঙিয়ে ও বারান্দায় রাত্রিযাপন করে। পরে সকালে সমাবেশস্থলে তারা যোগদান করেন। সমাবেশের মাঠে একইভাবে শুক্রবার রাত্রিযাপনের পর নেতাকর্মীরা শনিবার সমাবেশে অংশ নেবেন। এছাড়া শনিবার সকাল পর্যন্ত ট্রেন, কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলে করে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসবেন।

দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, ‘দিনাজপুরে ধর্মঘট নেই, দিনাজপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত বাস চলছে। তবে সৈয়দপুর থেকে রংপুর পর্যন্ত সকল প্রকার যাত্রীবাহী বাহন বন্ধ রয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা ট্রাক ও বাসে সৈয়দপুর যাচ্ছি। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, লেগুনায় করে রংপুরে পৌঁছাব। আজ শুক্রবার রাতের মধ্যেই নেতাকর্মীরা রংপুর শহরে ঢুকবে।’

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের প্রতিবন্ধী আজিজার রহমান বলেন, ‘আমি বিএনপিকে ভালবাসি। তাই বিএনপির সমাবেশ দেখতে কষ্ট করে রংপুরে এসেছি। বর্তমান সরকারের আমলে চালের দাম বেশি, তেলের দাম বেশি। আমাদের আয় হয় ১০ টাকা, আর ব্যয় হয় ২০ টাকা। তাই এই সরকার পতনের আন্দোলনে কষ্ট করে হলেও এসেছি।’

রংপুরে বিএনপির সমাবেশস্থলে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের প্রতিবন্ধী আজিজার রহমান। ছবি: সমকাল

এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজে রংপুর নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মুসল্লিদের চাপে মসজিদগুলোর সিড়ি, ছাদে নামাজ আদায় করা হয়েছে।

 

বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়দের বাড়িতে উঠেছেন নেতাকর্মীরা। সেখানে অবস্থান করে শনিবার তারা সমাবেশে যোগ দেবেন। ঠাকুরগাঁও হরিপুর থেকে নগরীর হাজীরহাটে আত্মীয়র বাড়িতে ওঠা বিএনপির কর্মী আসাদুল জানান, খুলনার সমাবেশ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা রংপুরের সমাবেশের কয়েকদিন আগেই আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি। আমরা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলাম পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবে। এমন কয়েক হাজার নেতাকর্মী তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন। সরকার যতই বাঁধা দিক সমাবেশে আসা মানুষকে ঠেকাতে পারবে না।