বিএনপি নেতা কামাল হত্যা, ১০ জনের নামে মামলা

সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুনের প্রায় ৪৯ ঘন্টা পর মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে নিহতের ভাই মইনুল হক বাদী হয়ে নগরের বিমানবন্দর থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

মামলায় আজিজুর রহমান সম্রাটকে প্রধান হিসেবে উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মামলায় আজিজুর রহমান সম্রাটকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের নামোল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়।

 

তবে এখনও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি এবং তদন্তের স্বার্থে এজাহারে উল্লেখ অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।

গত রোববার (০৬ নভেম্বর) রাত ৯টায় আফম কামাল প্রাইভেটকারে চালকের আসনে বসা ছিলেন।

 

তাকে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলে ৩ জন যুবক অনুসরণ করে আসছিল। ঘটনাস্থল সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডের বড়বাজার এলাকায় ১১৮ নং বাসার সামনে পৌছামাত্র সামন থেকে আসা দুই যুবক মোটরসাইকেলটি গাড়ির সামনে ফেলে দেয়। তাতে প্রাইভেট কারের গতিরোধ করলে পেছনের মোটরসাইকেলের দিন যুবক চালকের আসনে বসাঅবস্থায় কামালের বুকে ও হাতে ছুরিকাঘাত করে। দুর্বুত্তরা গাড়ির এক পাশ আটকিয়ে পেছনের সীটে বসেও তাকে ছুরিকাঘাত করে, এমনটি ধারণা পুলিশের।

এসময় দুর্ঘটনা ভেবে প্রাইভেট কারের সামনে পড়া মোটরসাইকেলটিও জনতার সহায়তায় তুলে নিয়ে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। প্রথমে লোকজন এটিকে দুর্ঘটনা মনে করলেও পরক্ষণে বুঝতে পারেন ঘটনাটি ছিল হত্যাকাণ্ড।

 

এ ঘটনার পর রাতে বিএনপি ও অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি নগরের রিকাবিবাজারে এসে কবি নজরুল অডিটরিয়ামে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভাস্থলে ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় এবং একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে।

 

সোমবার (০৭ নভেম্বর) বেলা ২টার দিকে আফম কামালের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ স্বজনরা দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানাধীন আলীনগর পালপুরে নিয়ে যান।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. সামসুল ইসলাম বলেন, নিহতের দেহে ২৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে ২টি, বুকের বামপাশে ১টি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে বুকের বাম পাশের ধারালো অস্ত্রের আঘাতটি ছিল গুরুতর। এই আঘাতটি হৃদপিন্ড ফুটো করে দেয়। এই একটি আঘাতই মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এছাড়া বাম হাতে ও পায়ে অধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ঘটনার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের্‌ উপ কমিশনার আজবাহার আলী জানিয়েছিলেন, আ ফ কামাল খুনের ঘটনায় দুই মোটরসাইকেলে ৫ যুবক সরাসরি অংশ নেয়।

একাধিক সূত্র ও পুলিশ জানায়, ছাত্রলীগের লেবাসধারী আজিজুর রহমান সম্রাট আগে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে শাকিল ও রাজুর নাম উঠে আসছে।

উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ আরো বলেন, আ ফ ম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ও ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তার ট্রাভেল এজেন্সি থেকে আজিজুর রহমান সম্রাটের আত্মীয়কে সৌদি আরবে পাঠানো নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, আ ফ ম কামাল হত্যার জেরে সিলেটে ছাত্রদলের মিছিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা না হওয়ায় আটক ৪ জনকে মঙ্গলবার বিকেলে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ কথা জানান সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী মাহমুদ।

গ্রেফতারকতৃরা হলেন- ইশতিয়াক আহমদ রাজু, বদরুল ইসলাম নজরুল, মিলাদ আহমদ ও রাজীব আহমদ। তারা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও জানিয়েছে পুলিশ।