ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কলেজের প্রভাষক!

satro lig

একই সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা এবং কলেজের প্রভাষক। ঠিকানা পরিবর্তন করে ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে কলেজের চাকরি বাগিয়ে নেন তিনি। একসময় ছাত্রশিবিরের কর্মী ছিলেন। টাকার বিনিময়ে কলেজ হোস্টেলে শিবির পুনর্বাসনের অভিযোগও রয়েছে। ইন্টার্ন পরিষদের সভাপতি পদে থাকার সুবাদে টেস্ট ও ট্রলি বাণিজ্যের সিন্ডিকেটের নেতৃত্বও দেন তিনি। এতসব অভিযোগ সত্ত্বেও রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন রাকিবুল হাসান তারেক।

২০২১ সালের ৩১ মে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ৯ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটিতে সানাউল হুদা রিয়াদকে সভাপতি ও রাকিবুল হাসান তারেককে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি এক বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এক বছর শেষ হলেও বিভিন্ন তালবাহানা করে কমিটি দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। ওই কমিটি দেওয়ার পর তারেক এত বড় পদ পাওয়ায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই ছাত্রশিবিরের কর্মীকে ছাত্রলীগে পদ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমান সেক্রেটারি রাকিবুল হাসান তারেক চট্টগ্রাম মহসিন কলেজ ছাত্রাবাসে শিবিরের কর্মী হিসাবে সক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সেক্রেটারি হয়েই ছাত্রশিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ছাত্রাবাসে শিবিরের পুনর্বাসন শুরু করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যাবে মেডিকেলের ডা. পিন্নু ও ডা. মুক্তা ছাত্রাবাসে। জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে তিনি প্রায় ৩৪ জন শিবির সদস্যকে হোস্টেলে রুমে তুলেছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় নতুন করে শিবির তুলতে পারেননি।

একাধিক সূত্রে অভিযোগ উঠে এসেছে, তারেকের স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজারের চকরিয়ায়। পরিচয় গোপন করে তিনি রংপুরের ঠিকানায় করেছেন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগে পদ থাকাকালীন কোনো চাকরি করার সুযোগ নেই। তারেক রংপুর ডেন্টাল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রভাষক হিসাবে চাকরি করছেন। নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের বেতন, কর্মস্থলে প্রতিদিন উপস্থিত থাকার প্রমাণও মিলছে তার হাজিরা খাতায়।

রংপুর মেডিকেল কলেজের হেলিপ্যাড ছাত্রাবাসের (পূর্বনাম রাষ্ট্রপতি জিয়া ছাত্রাবাস) সাবেক ছাত্রদল সভাপতি এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক স্টোরকিপার (২ কোটি টাকার ওষুধ চুরির অভিযোগে যুক্ত) ডা. গোলাম রসুল রাখির সঙ্গে তারেকের গভীর সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়।

এ বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাদ দিয়ে সাবেক ছাত্রদলের সভাপতিকে তারেক অতিথি করেন, যা মেডিকেলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের নজরে এলে প্রতিবাদ করেন, যার ফলে ডা. রাখিকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও বাংলাদেশ আওয়ামি লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করার কথা বলে কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উঠালেও অনুষ্ঠান না করেই পুরো টাকা তারেক নিজের পকেটে নিয়েছেন বলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।

বেপরোয়া তারেকের ভাষ্যমতে, তার মাথার ওপর অনেক শক্তিশালী হাত আছে। এজন্য তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ইন্টার্ন করছেন হাসপাতালে এবং তিনি ইন্টার্ন পরিষদের সভাপতি। অথচ তার এই এক বছরের অধিক সময়টার পুরোটাই তিনি মেডিসিন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ইউনিট থেকে তিনি বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে টেস্ট বাণিজ্য করেন, গরিব রোগীদের নানানভাবে হররানি করে অর্থ আদায় করেন। হাসপাতালে রয়েছে তারেকের ৩০ সদস্যের এক কর্মচারী সিন্ডিকেট, যারা ওয়ার্ড বয় হিসাবে কিংবা ট্রলি ঠেলার নাম করে প্রতি রোগীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

রাকিবুল হাসান তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি তো ভাই সংগঠন করি, মিছিল মিটিং করি, আমার তো খরচ আছে। তা না হলে আমি সংগঠন চালাব কী করে! চাকরি করেন, বিষয়টি জানতে চাইলে তারেক জানান, আমি একজন প্রেগনেন্ট মহিলার অনুপস্থিতে ছয় মাস ধরে চাকরি করছি। দুই জেলার জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আট বছর ধরে রংপুর থাকি! আমি তো বাংলাদেশের নাগরিক।

আমি তো রোহিঙ্গা নই যে আমার এনআইডি সংশোধন করা যাবে না? নাগরিক হওয়া যাবে না! আমি রংপুরে এনআইডি ঠিক করতে দিয়েছি কক্সবাজার নাম দিয়ে, তারা ভুল করলে আমার কী দোষ? দেড় বছর আগে ৯ সদস্যবিশিষ্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি কেন জানতে চাইলে তারেক বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। এখানে কিছু কমপ্লিকেশন আছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কিছু সমন্বয়হীনতার কারণে দেড় বছরেও রংপুর মেডিকেল কলেজের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারিনি! সেন্ট্রাল কমিটির সঙ্গে কথা বলে আমরা দ্রুত কমিটি দিয়ে দেব। আর নতুন কমিটি এলে তাদেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেব।