ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জমি বেচাকেনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

এখন থেকে ভুয়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি বেচাকেনা করা যাবে না। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

কাগুজে কিংবা ভুয়া যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্ম দেখিয়ে জমি কেনাবেচার মাধ্যমে বেআইনি কাজ করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দলিলে বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমিকে আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমি হিসেবে দেখিয়ে তাতে লাভজনক বৃহৎ ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। এর ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র।

বিভিন্ন ভূমিসেবা, যেমন: ই-নামজারি কিংবা ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনায় আরজেএসসির এখতিয়ারভুক্ত কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ হওয়ার ফলে এখন ভুয়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। ফলে, সরকারের কোষাগারে ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হবে, যা এতদিন হতো না!

এছাড়া, ভূমি এবং আরজেএসসি সিস্টেমের স্বয়ংক্রিয় আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থার কারণে ই-নামজারি করার সময় করণিক ভুল হবে না। কারণ, আরজেএসসি সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করা হবে সংশ্লিষ্ট নামজারির পূর্বে।

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে রোববার সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ‘যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর’ (আরজেএসসি) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

আরজেএসসি নিবন্ধক শেখ শোয়েবুল আলম এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনির নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আরজেএসসি’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের ফলে ভূমিসেবা সিস্টেম এবং আরজেএসসি সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ এবং সমন্বয় স্থাপন হবে।

প্রসঙ্গত, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে এবং প্রয়োজন হলে তা পূনঃনির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ কর পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের মূল ভিত্তি জমির ব্যবহারের ধরণ।

সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেখা যায়, সাধারণ অকৃষি জমি ক্ষেত্রে যে এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ৩০০ টাকা ও শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ১৫০ টাকা; সেখানে আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার মাত্র ৬০ টাকা। অন্যদিকে, কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির কোনো ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয় না। সাধারণ ক্ষেত্রে ২৫ বিঘার বেশি হতে ১০ একর পর্যন্ত কৃষি জমির জন্য প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা। কৃষি জমি ১০ একরের ঊর্ধ্বে হলে প্রতি শতাংশ ১ টাকা। এলাকা এবং ব্যবহার ভেদে অকৃষি ও কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর কম-বেশি হতে পারে, যা এ সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

উল্লেখ্য, আরজেএসসি পাবলিক কোম্পানি, প্রাইভেট কোম্পানি, বিদেশি কোম্পানি, ট্রেড অর্গানাইজেশন (বাণিজ্য সংগঠন), সোসাইটি (সমিতি), পার্টনারশিপ ফার্ম (অংশীদারি কারবার) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দেয় এবং প্রযোজ্য আইনের বিধি মোতাবেক পরিচালনা নিশ্চিত করে।