যুদ্ধপরাধ মামলায় আটক সেই যশোরের কুখ্যাত রাজাকার বাহিনীর সাঙ্গপাঙ্গরা বেপরোয়া

Jessore map

যুদ্ধপরাধ মামলায় আটক সেই যশোরের কুখ্যাত রাজাকার আমজাদ হোসেন মোল্লার প্রধান সেনাপতি চিহিৃত সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনীর সাঙ্গপাঙ্গরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অচিরেই এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে জেনে মামলার বাদী, সাক্ষী ও তদন্ত কাজে সহয়তাকারীদের সহ তাদের পক্ষীয়দের উপর চলছে নানারকম হয়রানি। নিজেদের বিচালী গাদায় নিজেরাই আগুন দিয়ে, কচুর খেত নষ্ট করে, কখনো মিথ্যা মামলা, কখনো তাদেরকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে, আবার কখন ও আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের স্বজনদের রাজাকার বানিয়ে চলছে অত্যাচার-নির্যাতন। আমজাদের রাজাকার মামলার শুরুতে স্বাক্ষী এহিয়ারের ভাইপো জহির মোল্যাকে ও স্বাক্ষী ইছাহক মোল্যার নাতিকে কুপিয়ে জখম করে এবং ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা চালানো ছাড়াও স্বাক্ষীর ভাই তফসির মোল্যাকে জবাই করে হত্যা করে সন্ত্রাসী টুকুল-মহসিন বাহিনী। আর এ সবকিছু করা হয়েছে আমজাদ রাজাকারের বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত করার জন্য। এখানে আশ্চর্যজনকভাবে ওই চিহিৃত সন্ত্রাসী টুটুল তার এক আত্মীয়ের হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে কাল্পনিক যুদ্ধাপরাধ মামলা দায়েরের পায়তারা করছে স্বাক্ষীদের-স্বজনদের নামে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কো-অর্ডিনেটর তদন্ত সংস্থা, পুলিশ হেডকোয়াটার্স, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি, কোম্পানি কমান্ডার র‍্যাব-৬ যশোর ও পুলিশ সুপার যশোর সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন আমজাদ মোল্লার যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী পক্ষীয়রা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী এবং তদন্তকাজে সহায়তাকারী হিসেবে তারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রদান এবং সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনীদের বিরূদ্ধে এখনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে আমজাদ মোল্যার যুদ্ধপরাধ মামলার বাদী পক্ষীয়রা।

আবেদনে তারা বলেছেন, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার প্রেমচারা গ্রামের যুদ্ধাপরাধ মামলায় আটক কুখ্যাত রাজাকার আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ কয়েকজন রাজাকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনালে তারা সাক্ষ্য প্রদানসহ তদন্তকাজে সহায়তা করেছেন। যার নম্বর আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপ্লেউন্ট রেজিঃ নং-৮১, তারিখ: ২৫/০৪/২০১৮ইং এবং আইসিটি বিডি কেস নং-১১/১৮। মামলার শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই আমজাদ রাজাকারের প্রধান সেনাপতি সন্ত্রাসী টুটুল-মহাসিন বাহিনী তাদেরকে সহ অন্যান্য সাক্ষীদের ও তাদের স্বজনদের উপর একাধিকবার হামলা করেছে এবং সাক্ষীর ভাইকে হত্যা পর্যন্ত করেছে। এমনকি স্থানীয় শীর্ষ জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় তাদেরকে সরকার বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের কমর্ী বানিয়ে বিভিন্ন সময়ে মামলা দায়ের করেছে। যদিও পরবতর্ীতে যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার ও বর্তমানে ডিআইজি-খুলনা রেঞ্জ মঈনুল হক বিপিএম (বার), পিপিএম-এর হস্তক্ষেপে ওই সব মামলার ফাইনাল রিপোর্ট হয়েছে। অচিরেই এ মামলার রায় হতে যাচ্ছে জেনে বর্তমানে পূর্বের ন্যায় ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের স্বজনদের বিএনপি-জামায়াতের কমর্ী বানিয়ে মামলা দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি স্বাক্ষীর স্বজনদের উল্টো যুদ্ধাপরাধ মামলায় জড়ানোর পাঁয়তারা করছে।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী আমজাদ হোসেন মোল্লা বর্তমানে কারাগারে আটক থাকাকালেও তার রয়েছে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। সেই সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান সেনাপতি বাঘারপাড়া থানার এক সময়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তরিকুল ইসলাম টুটুল মন্ডল, সাবেক চেয়ারম্যান ও শওকত মন্ডল, কুখ্যাত আদম ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার গাড়ি বহরে হামলা-মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামি প্রেমচারার সন্ত্রাসী মহাসিন বিশ্বাস, তার ছোটো ভাই ইব্রাহীম বিশ্বাস, আমজাদ রাজাকারের ভাগ্নে জাহিদুল ইসলাম, ছোট ভাই মাসুম বিল্লাহ, চাচাতো ভাই রবিউল ইসলাম প্রমুখ। এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্তমান সময়ে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সন্ত্রাসীরা তাদের এবং পরিবারের উপর হামলার পরিকল্পনা করছে। আমজাদের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

আবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কুখ্যাত রাজাকার বিএনপি নেতা আমজাদ মোল্লা যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেফতারের ১ বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সে কারণে আমজাদ রাজাকারের সন্ত্রাসী বাহিনী বর্তমানে আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে।

কুখ্যাত রাজাকার আমজাদ মোল্লার বিচারকার্য বর্তমানে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সব সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী ২/১ মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমজাদ রাজাকারের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী এখন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের উপর যে কোন মুহূর্তে হামলা-মামলা করতে পারে বলে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তারা সকলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী ও তদন্তকাজে সহায়তাকারীদের পক্ষে ওই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন আলাউদ্দীন বিশ্বাস, খলিলুর রহমান খোকন বিশ্বাস, ডা. বি এম রুহুল আমিন, ইসাহাক মোল্লা, আব্দুল হক মোল্লা, এহিয়ার রহমান, রাকিব উদ্দিন রতন বিশ্বাস প্রমুখ।

উল্লেখ্য, টুটুল-মহসিন বাহিনী ইতিপূর্বে একটি চরমপন্থী সন্ত্রাসী দলের তালিকাভূক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছিল। তারা বিগত বিএনপি আমলে নানাভাবে যশোরের বাঘারপাড়া ও পার্শ্ববর্তী মাগুরার শালিখা উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর ধারবাহিক চাঁদাবাজি-নির্যাতন চালায়। যে কারণে অসংখ্য সংখ্যালঘু পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়; বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পিতা বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক মনু মাস্টারকে যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানরত অবস্থায় ১৯৮৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর টুটুলের নেতৃত্বে সশন্ত্র দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে খুন করে। আশির দশকের শেষের দিকে সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ভজন ঘোষ গুলি করে ও কুপিয়ে এবং বন্দবিলা ইনিয়নের কালিপদকে বড়খুদড়ার কালিতলা হাটে সন্ত্রাসী টুটুলের নেতৃত্বে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।