সেই জঙ্গির লাশ উধাও, কবরে মিলল কম্বল

বান্দরবানের রুমায় পাহাড়ের অরণ্যে কবর খুঁড়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া সদস্য আলামিনের লাশ পাওয়া যায়নি। কে বা কারা মাটি খুঁড়ে লাশ নিয়ে গেছে বলে দাবি করেছে র‌্যাব। তবে মৃতদেহ মোড়ানো কম্বলসহ বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে।

রোববার উদ্ধারে গিয়ে নিখোঁজের লাশ পাওয়া যায়নি। মৃত আলামিন কুমিল্লার হালিমানগরের মো. নূরুল ইসলামের ছেলে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবক পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী পাহাড়ের গহীন অরণ্যে বিভিন্ন সময়ে পৃথকভাবে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) অর্থের বিনিময়ে ভারি অস্ত্র চালানো, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া কয়েকজন জঙ্গির নিজেদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ঘটে। এ সময় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে একজনকে হত্যা করে পাহাড়ের নিচে মাটিতে কবর দেওয়া হয় বলে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দেয়।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার গ্রেফতার দুই জঙ্গিকে নিয়ে যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কবরের সন্ধান পান। রোববার সকালে পুনরায় যৌথ বাহিনী এবং পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নোমান শিবলি হেলিকপ্টারযোগে ঘটনাস্থলে গিয়ে কবর খুঁড়ে দেখেন জঙ্গির মরদেহ উধাও। তবে কবর খুঁড়ে জঙ্গির মৃতদেহ মোড়ানো কম্বলসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

জঙ্গির পিতা কুমিল্লা হালিমানগরের বাসিন্দা মো. নূরুল ইসলাম বলেন, আমার সন্তানকে যারা ভুলপথে উদ্বুদ্ধ করেছে তাদের বিচার চাই। কবরে আমার সন্তানের মৃতদেহ নেই কিন্তু কবরে পাওয়া কাপড়-চোপড়সহ বিভিন্ন আলামতে দেখে পুত্রের বলে শনাক্ত করেছেন পিতা। পুত্রের মৃতদেহের খোঁজে ছয় ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, গত ১১ জানুয়ারি থানচি ও রোযাংছড়ি থেকে পাঁচ জঙ্গি গ্রেফতার হয়। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঘটনাস্থলে গিয়ে কবরে মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তবে মৃতদেহের বিভিন্ন আলামত পাওয়া গেছে কবরে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরছাড়া ৫৫ জন যুবক পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সহযোগিতায় পাহাড়ে গোপন আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে গত ১১ জানুয়ারি অভিযানে রোয়াংছড়ি থেকে ২ জন এবং থানচি থেকে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক অভ্যন্তরীণ মতবিরোধে হত্যা করা এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধারে পাহাড়ের গহীন অরণ্যে অভিযান চালানো হয়।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া ১২ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের ১৪ জন সদস্যকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। রাঙামাটি থানায় দায়ের করা জঙ্গি মামলায় অভিযুক্ত আসামি তারা।