সিলেটে জ্বালানি সংকট, আন্দোলনে যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা

সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট নিরসনে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে এলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্থানীয় পরিশোধনাগার বন্ধ ও শীত মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় সংকট আরও বেড়েছে।

এজন্য সিলেটের পরিশোধনাগারগুলো চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় ভৈরব থেকে নিজ খরচে ব্যবসায়ীদের জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আন্দোলনে যাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর ধারাবাহিকতায় আগামী রোববার থেকে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেন।

জ্বালানি ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেট জেলায় ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন মিলিয়ে প্রতিদিনের চাহিদা ১০ লাখ লিটার। আগে সিলেটের গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত উপজাত দিয়ে স্থানীয় শোধনাগারগুলোর মাধ্যমে পেট্রল ও অকটেন উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য স্থানে পাঠানো হতো। প্রায় দুই বছর আগে বিএসটিআই’র মানসম্পন্ন জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না এমন অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিলেটের ছয়টি শোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সিলেটের ছয়টি শোধনাগারের মধ্যে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট দিয়ে প্রতিদিন গোলাপগঞ্জের রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড- আরপিজিসিএলের দুটি প্ল্যান্ট থেকে ৮০০ ও ৫০০ ব্যারেল, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের আওতাধীন হরিপুরে ৬০ ব্যারেল, কৈলাসটিলায় ৩০০ ব্যারেল এবং রশিদপুরের দুটি প্ল্যান্টে যথাক্রমে তিন হাজার ৭৫০ ও চার হাজার ব্যারেল পেট্রল, ডিজেল ও এলপিজি উৎপাদন হতো। শোধনাগারগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর গ্যাসক্ষেত্র থেকে উপজাত হিসাবে পাওয়া কনডেনসেটগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি শোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সেখান থেকে রেলের ওয়াগনে করে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন সিলেটে এনে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা এই তিনটি কোম্পানির মাধ্যমে সরবরাহ করা হতো। সিলেটের শোধনাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই জ্বালানি সংকট দেখা দেয়। রেলের ইঞ্জিন ও ওয়াগন সংকট, ঘন ঘন দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ নিয়ে জ্বালানি ব্যবসায়ীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত বছরের ১০ মার্চ সিলেট সফরে বিপিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক বলেছিলেন-সংস্কারের মাধ্যমে সিলেটের সব ক’টি শোধনাগার আবার চালু করা হবে। কিন্তু শুধু রশিদপুরের প্ল্যান্টটি চালু হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, সপ্তাহে যেখানে সাতটি তেলবাহী লরি চট্টগ্রাম থেকে আসার কথা সেখানে এসেছে মাত্র একটি। তাই জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা উপায় না পেয়ে ভৈরব থেকে তেল আনছেন। এতে পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছেন।

সিলেট বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মনির হোসেন বলেন, ডিপো কর্মকর্তারা ডিলারদের জ্বালানি তেল সরবরাহে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। শীত মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবি জানান তিনি।