‘জমজমের পানি’ বিক্রি বন্ধ করল ভোক্তা অধিদপ্তর

বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে বোতলজাত ‘জমজমের পানি’ বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ পানি বিক্রির কোনো বৈধতা আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

আজ সোমবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পবিত্র জমজম কূপের পানি খোলা বাজারে বিক্রয়–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় এই পানি বিক্রির আইনগত ও নৈতিক বৈধতা নিয়ে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটে বোতলজাত করে জমজমের পানি বিক্রি হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভোক্তা অধিদপ্তর রোববার অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ৫ লিটার ও ২৫০ মিলিলিটারের বোতলে জমজমের পানি বিক্রির প্রমাণ পাওয়ার পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাজি কিংবা হজ পরিচালনাকারী বিভিন্ন এজেন্সি থেকে তারা এই পানি সংগ্রহ করেন।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সংবেদনশীল। এটা আমাদের সামনে আসার পরে আমরা দ্রুত সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তার ভিত্তিতে সাময়িকভাবে বায়তুল মোকাররম মার্কেটে পবিত্র জমজমের পানি বিক্রি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কারণ, সৌদি আরবেও এই পানি বিক্রি হয় এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, যতটুকু জানা গেছে, জমজমের পানি বিক্রি করার আইনি কোনো বৈধতা নেই। এরপরেও আমরা যাচাই-বাছাই করতে চাই। এজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমার মনে হয় না, কোনো হাজি বিক্রির জন্য সৌদি থেকে জমজমের পানি নিয়ে আসবেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সৌদি সরকার যদি এটা জানে, তাহলে আমাদের দেশের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। এছাড়া এমনও হতে পারে যে বাংলাদেশিদের জন্য জমজমের পানি নিয়ে আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী সুলতান কবিরাজ বলেন, অনেক সময় হাজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মোয়াল্লেমরা ফেলে যাওয়া বোতলগুলো বায়তুল মোকাররমে নিয়ে আসেন। তখন আমরা এটা কিনে বিক্রি করে থাকি।

বায়তুল মোকাররম ব্যবসায়ী গ্রুপের অফিস ব্যবস্থাপক আহমেদুল হক বলেন, হাজিদের মনোভাব এমন থাকার কথা নয় যে, তারা এ পানি বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসবেন। বিষয়টিতে আমাদেরও সেভাবে নজর ছিল না। আশা করি আরও আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার বলেন, গতকাল বায়তুল মোকাররম মার্কেটে অভিযান পরিচালনার সময় দেখা গেছে যে জমজমের পানি হিসেবে ছোট বোতল ৩০০ টাকায়, আর ৫ লিটারের বোতল ২ হাজার ৫০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযান পরিচালনার খবর পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান।

ঢাকার নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জানান, তাদের মার্কেটের কিছু ব্যবসায়ীও জমজমের পানি বিক্রি করছেন। দেশের অন্য কোথাও এটা করা হয়ে থাকলে তা বন্ধ করতে হবে।

শফিউল্লাহর দাবি, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের আশপাশে এই পানি বিক্রির পাইকারি বাজার রয়েছে। মানুষের আবেগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফা লাভের চেষ্টায় এই কাজ করছে বলেও মনে করেন তিনি।