আইপিএলে যাওয়া নিয়ে এবার দোটানায় সাকিব

অনেক বছর পর এবার তিনজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন আইপিএলে। দিল্লি ক্যাপিটালস ধরে রেখেছে মুস্তাফিজুর রহমানকে। সাকিব আল হাসান ও লিটন কুমার দাসকে নিলাম থেকে নিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ভেন্যু ভারত হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ তিন ক্রিকেটার আইপিএলের পুরো মৌসুম খেলতে পারলে জাতীয় দলের জন্যই ভালো হতো। এনওসি জটিলতায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।

বিসিবির এই সিদ্ধান্তে মনঃক্ষুণ্ন ক্রিকেটাররাও। গুঞ্জন আছে, লিগের প্রথম থেকে এনওসি না দেওয়ায় আইপিএল থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন সাকিব। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আইপিএলে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দোটানায় পড়েছেন সাকিব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাকিব আশা করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি২০ সিরিজ শেষ করেই কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেবে বিসিবি। মে মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ সুপার লিগের শেষ সিরিজ থেকেও ছুটি পাবেন তিনি। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানান, জাতীয় দলের খেলা শেষ হলে আইপিএলের অনাপত্তিপত্র পাবেন তিন ক্রিকেটার।

মুস্তাফিজুর রহমান টেস্টের চুক্তিতে না থাকায় টি২০ সিরিজ শেষ করেই দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দিতে পারছেন। সাকিব-লিটনকে যেতে হবে টেস্ট ম্যাচ শেষ করে। কারণ, তাঁরা দু’জনই লাল বলের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার এবং অধিনায়ক-সহঅধিনায়ক। বিসিবি থেকে সেভাবেই অনাপত্তিপত্রও তৈরি করতে বলা হয়েছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগকে।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আইরিশদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি চলবে ৪ থেকে ৮ এপ্রিল। টেস্ট শেষ করে যেতে হলে সাকিব-লিটন কেকেআরের দুই থেকে তিনটি ম্যাচে নাও থাকতে পারেন। কেকেআর ম্যানেজমেন্ট বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না। টি২০ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাছের একজন সমকালকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনাপত্তিপত্র দেওয়া নিয়ে বিসিবি যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে কেকেআর ভালোভাবে নেয়নি। টেস্ট খেলে যেতে হলে অর্ধেক ম্যাচেও থাকতে পারবে না। ১৫ থেকে ২০ দিন পাবে। আর ওখানে গেলেই তো খেলাবে না। এ কারণেই হয়তো আইপিএলে না যাওয়ার কথা ভাবছে সে। যতটা বুঝতে পেরেছি, সে না যাওয়ার ব্যাপারে একপ্রকার মনস্থির করে ফেলেছে।’

অবশ্য এ ব্যাপারে সাকিবের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। বিসিবি সভাপতি একাধিকবার মিডিয়াকে বলেছেন, নিলামের সময় যেভাবে ক্রিকেটারদের স্লটের বিষয়টি লিখিত আকারে দেওয়া হয়েছে, সেটাই অনুসরণ করা হবে। সাকিবও তাই নিজে থেকে বোর্ড সভাপতি পাপনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছেন না। তবে তিন ক্রিকেটারই আইপিএলের পুরো সময়ের জন্য অনাপত্তিপত্র চেয়েছেন। ৩১ মার্চ গুজরাট টাইটান্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুরু হওয়া আইপিএল চলবে ২১ মে পর্যন্ত।

বিসিবির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ আইপিএল কর্তৃপক্ষ পরের মৌসুমের নিলামে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের না রাখার কথা ভাবছে বলে খবর বেরিয়েছে ভারতে। এ নিয়ে আইপিএল কর্তৃপক্ষ বিসিসিআইকে চিঠি দেবে বলেও খবরে লেখা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় লঙ্কান ক্রিকেটারদেরও রাখা হতে পারে। গতকাল এই খবর দেশে প্রচার হওয়ার পরই ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন। নাম গোপন রাখার শর্তে জাতীয় দলের সাবেক একজন ক্রিকেটার বলেন, ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও সাকিবদের নিয়ে খেলতে হলে বলতে হবে দেশের ক্রিকেট একটুও এগোয়নি। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বা বিসিবি সভাপতি কি অন্য ক্রিকেটারদের ওপর এতটুকু আস্থা রাখতে পারেন না। তাঁরাই তো দেখছি দেশের ক্রিকেটের উন্নতির অন্তরায়। আইপিএল কর্তৃপক্ষ সত্যি সত্যি বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের বয়কট করলে ক্ষতি হয়ে যাবে। দু’দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে সম্পর্কেরও অবনতি হতে পারে।