দেশে শিগগিরই গণঅভ্যুত্থান হবে: খন্দকার মোশাররফ

বাংলাদেশে শিগগিরই গণঅভ্যুত্থান হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। কারণ, তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তারা মনে করে এই সরকার কোনোকিছুই মেরামত করতে পারবে না। সেজন্যই জনগণের মধ্যে এই সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলার আবুল সালাম মিলনায়তনে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর ও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যারা হত্যা করে তারা অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না। ব্যবস্থা যারা বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে পারবে না। অতএব তাদেরকে যত দ্রুত বিদায় করা যায় ততই জাতি এবং দেশের জন্য কল্যাণকর।

পেশাজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি জানি জনগণের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা যার যার অবস্থান থেকে এই সরকারকে যত দ্রুত সরিয়ে দেওয়া যায়, এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষকে যত দ্রুত মুক্ত করা যায় ততই মঙ্গল। এই ধরনের সরকার আপসে ক্ষমতা ছাড়ে না তাই এ সরকারকে যদি হঠাতে হয়, একটি গণঅভ্যুত্থান প্রয়োজন। গণঅভ্যুত্থান তখনই সম্ভব হয় যখন সকল পেশাজীবী সংগঠন, জনগণ, সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে গণঅভ্যুত্থান সফল করে। ইনশাল্লাহ সেই গণঅভ্যুত্থান অতি দ্রুত এদেশে হবে। সেখানে অভ্যুত্থানে জায়গার অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান তিনি।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. এম এ সেলিম, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, সহসভাপতি মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক ডা. মো মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, সেলিম ভূঁইয়া, ড্যাবের সহসভাপতি ডা শহীদ হাসান, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম কেন্দ্রীয় নেতা ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. আদনান হাসান মাসুদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নাই, সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। কারণ এই দেশে গণতন্ত্র নেই, এ দেশে হাইব্রিড সরকার দ্বারা পরিচালিত। আমরা শুধু বলছি না। আজকে সারা বিশ্ব বলছে।

বিগত ১৪ বছরে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যাপক বিপর্যয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের এ দুরবস্থা হয়েছে মূলত দলীয়করণের ফলে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেউ কেউ আবার দলীয় পরিচয় দিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে। এতে সাধারণ মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। জনগণের প্রতি সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই।

সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারের বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, একটা সার্কুলার বেড়িয়েছে– আগামী ৩০ মার্চ থেকে সরকারি হাসপাতালে বিকাল ৩টার পর থেকে ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বার করতে পারবে। দলীয় লোকদের পকেট ভারী করতে সরকার এ ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে জনগণের কোনও কাজ হবে না। হাসপাতালে আসা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাবেন? এক্ষেত্রে ডাক্তাররা নার্সিং এর দোহাই দিয়ে সময় বিলম্ব করবে।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে দলীয়করণ করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে স্পেশালিস্ট যে চিকিৎসা সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ওষুধের দাম বেড়ে যাবে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে যদি আমরা হটাতে না পারি, আমাদেরকে আরও দুর্দশার মুখে পড়তে হবে।

ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম বলেন, আজকে দুঃখ লাগে। আমি একজন সার্জন আমাকে যন্ত্রপাতি দেয় না। যদি বলি যন্ত্রপাতি দেন, বলে এলসি করতে পারছি না। অনেক রোগী এখন চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। হাসপাতাল বসে ডাক্তাররা প্রাইভেটভাবে ভিজিট নেয়ার প্রথার চালুর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তা বাতিল করার দাবি জানান তিনি।