হজ কোটা ফেরত দিতে সংশয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়

আট বার সময় বাড়িয়েও বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত হজ কোটা পূরণ হয়নি। এখনও চার হাজারের বেশি হজযাত্রী নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। এর সবগুলোই সরকারি কোটার আসন। এখন বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কোটা পূরণের চেষ্টা চলছে। তাই হজ কোটা ফেরত দিতে হবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ আছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৯৫ জন। অর্থাৎ, নিবন্ধন বাকি আছে ৭ হাজার ৫০৩ জনের। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের মতো কোটা সরকারি এবং বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনা টিম সদস্যদের দিয়ে পূরণ হবে। সে হিসেবে নিবন্ধনের জন্য প্রকৃত কোটা বাকি আছে চার হাজারের কিছু বেশি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হজ নিবন্ধন শুরু হয়। আট দফা সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ না হওয়ার মধ্যেই গত ১১ এপ্রিল থেকে উন্মুক্ত নিবন্ধন বন্ধ করা হয়েছে।

যদিও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এর আগে একাধিকবার বলেছেন যে, বিকল্প ব্যবস্থায় হজকোটা পূরণ হয়ে যাবে, চিন্তার কিছু নেই। আজ সোমবার প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলাম সোমবার সকালে সমকালকে বলেন, হজ কোটা ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বেসরকারি এজেন্সিগুলো এক হাজারের মতো বাড়তি কোটা বরাদ্দ নিয়েছে, আরও কিছু চাহিদার কথা জানিয়েছে, এ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর হজকোটা ফেরত দিতে হবে কিনা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি মাত্র হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এতে খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। উভয় প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত হবে কোরবানির খরচ। পরে সরকারি এবং বেসরকারি দুই প্যাকেজেই ১১ হাজার টাকা করে কমানো হয়।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, হজযাত্রীদের বাকি কোটাগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পূরণ করা গেলে হজ কোটা ফেরত দিতে হবে না। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হজ যাত্রীদের চূড়ান্ত তথ্য সৌদি আরবকে জানানোর সুযোগ আছে। তাই হজ কোটা পূরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

কেন ব্যর্থ ধর্ম মন্ত্রণালয়: ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় মাত্র ১৫ হাজার হজযাত্রীর দায়িত্ব থাকলেও নিবন্ধন হয়েছে ১০ হাজার ৩৫ জনের। অন্যদিকে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ হজযাত্রীর মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন। নিবন্ধনের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয় সামান্য কিছু হজযাত্রীর দায়িত্ব নিয়েও ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নিবন্ধন নিশ্চিত করতে পারেনি। অন্যদিকে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো এক লাখের ওপরে কোটা বরাদ্দ নিলেও তাদের প্রায় শতভাগ কোটা পূরণ হয়েছে।

হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এ বিষয়ে সমকালকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে বেশি উৎসাহী। এজেন্সি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়ে গেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবস্থাপনার কোটা কেন পূরণ হয়নি সেটা ধর্ম মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। তবে খালি থাকা সরকারি কোটা পূরণের জন্য আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি, দেখা যাক কী হয়।’

এদিকে আগামী ২১ মে বাংলাদেশ থেকে সৌদিগামী হজ ফ্লাইট শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত পৌনে ৪টায় চলতি হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে। এ বছর প্রি-হজ ফ্লাইটে মোট ১৬০টি ডেডিকেটেড ফ্লাইট পরিচালনা করবে বাংলাদেশ বিমান।

বিজি৩০০১ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। ফ্লাইটটি জেদ্দা বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৭টায় অবতরণ করবে। আগামী ২২ জুন বিমানের প্রি-হজ ফ্লাইট শেষ করার তারিখ নির্ধারিত আছে।