সাতদলীয় গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়ার ব্যাখ্যা দিতে জোটের বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। সেখানে তিনি জোটের শীর্ষ নেতাদের জানান, তাঁদের দল রাজনৈতিকভাবে নতুন। দলের সাংগঠনিক সক্ষমতা অর্জনে তাঁদের নিত্য-নতুন কর্মসূচিতে যেতে হবে। নতুন দল হিসেবে এখনই তাঁদের জোট রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্তি ও মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিকভাবে নিজেদের আরও ‘পরিপক্ব’ করতে বেশ কিছুদিন স্বতন্ত্র রাজনীতি করতে চান। পরে জোট রাজনীতিতে তাঁরা সম্পৃক্ত হবেন বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল রোববার সেগুনবাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের জানান, জোট ত্যাগের বিষয়ে তাঁদের আগেই চিন্তা করা উচিত ছিল। এমনকি জোট গঠনের পরও অনেক সময় ছিল। কিন্তু তাঁদের চলমান আন্দোলন যখন বেগবান হচ্ছে, তখন জোট ত্যাগের সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে ভুল বার্তা দেবে। এর পরও জোট ত্যাগের সিদ্ধান্ত জোটের বৈঠকেই আলোচনা করে নেওয়া যেত। কিন্তু কোনো আলোচনা না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জোট ত্যাগের সিদ্ধান্তে সবাই মর্মাহত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা।
জবাবে ভিপি নুর বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁরা জোটগত রাজনীতিতে না থাকলেও, তাঁদের সম্পর্ক অটুট থাকবে। গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। একইভাবে তারাও প্রত্যাশা করে, গণতন্ত্র মঞ্চের সভা-সমাবেশে তাদের দাওয়াত দেওয়া হবে।
বৈঠকের শুরুতে নুরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়ে জোট ত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করেন। সেখানে তাঁরা ১০ মিনিটের মতো ছিলেন। বৈঠকে ১২ মে বিকেলে শাহবাগ চত্বরে গণতন্ত্র মঞ্চ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এবারের কর্মসূচিতে বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা হয়। একই দিন পৃথকভাবে গণঅধিকার পরিষদও দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আয়োজন করেছে।
বৈঠক শেষে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণঅধিকার পরিষদের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে দুঃখজনক অভিহিত করে মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাই যখন বিরোধী দলগুলোর লক্ষ্য, তখন সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক কারণ ছাড়াই একতরফাভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া চলমান আন্দোলনকে সাময়িক ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এতে আন্দোলনে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তারা এটা কেন করল, বিশেষ কোনো মহলের কোনো উস্কানি আছে কিনা অথবা কারও কোনো ফাঁদে পা দিচ্ছে কিনা– সচেতন মহল ইতোমধ্যে এ সময় প্রশ্ন উত্থাপন করছে।
তিনি বলেন, যৌথ আন্দোলন করতে গেলে কিছু রাজনৈতিক সংস্কৃতি, কিছু ন্যূনতম ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ থাকে। এগুলোর কোনো কিছুকে তারা কখনোই আমলে নেয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি, অতি কথন, কাউকে তোয়াক্কা না করা এবং তাদের প্রচণ্ড মিডিয়া ক্রেজ মঞ্চকে বিভিন্ন সময় বিব্রত ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। শুরু থেকেই তাদের একটা গা-ছাড়া মনোভাব ছিল। এগুলো নিয়ে জোটের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন সময় গণঅধিকার পরিষদ দুঃখ প্রকাশ, এমনকি আত্মসমালোচনাও করেছে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চের ইফতার মাহফিল থেকে সবশেষ কয়েকটি কর্মসূচিতে তারা অনুপস্থিত ছিল।