২ হাজার টাকা কর আয়করের মূলনীতির পরিপন্থি: এমসিসিআই 

প্রতি বাজেট জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় করা হলেও এবার আন্তর্জাতিক স্বার্থ বেশি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বাজেট বরাবরের মতোই উচ্চাভিলাসী, গতানুগতিক। প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আয়, ঘাটতি অর্থায়ন, মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলনে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতারা। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এমসিসিআই এর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কামরান টি. রহমানের সভাপতিত্বে পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার, ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বাজেটের নানা দিক তুলে ধরেন।

পিআরআই’র চেয়াম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, এটা নির্বাচনের বছর। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নির্বাচনের আগে প্রতি বাজেটে জনতুষ্টির জন্য সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেয়, এবার তার ব্যতিক্রম। ব্যয়-জিডিপি অনুপাত ২০২৩ সালের মতো রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও বাহ্যিক ভারসাম্যের চাপের প্রেক্ষিতে রক্ষণশীল বাজেট যুক্তিযুক্ত ছিল।

পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি আমদানির কারণে বলা হচ্ছে। গত এক বছরে ৯ শতাংশে ঘোরাঘুরি করছে। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। থাইল্যান্ড, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত ও ভিয়েতনাম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে, আমরা পারিনি। কারণ সরকার টাকা ছাপিয়ে ঋণ নিচ্ছে, ব্যাংক ঋণের সুদ ও মুদ্রা বিনিময় হার বেঁধে দিয়েছে। অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের আইডিয়া দীর্ঘমেয়াদে সেটা অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে। এবারের বাজেটে প্রবৃদ্ধি, ঘাটতি, চলতি অর্থবছরে ব্যায় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা উচ্চাভিলাসী। এ সময় প্রবৃদ্ধি কম ধরে বাজেট দিলে সমস্যা হতো না, অর্থনীতি স্থিতিশীল হতো।

 

সাদিক আহমেদ বলেন, ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিপুল অংকের ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে স্বল্প সুদে বিদেশি ঋণ অথবা বাজারভিত্তিক অভ্যন্তরীণ ঋণ নিতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর আয়কর আইনের মূলনীতি পরিপন্থি, এই কর থাকা উচিত নয়। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মার্গারেট থ্যাচার পোল ট্যাক্স নামে এক ধরনের কর আরোপ করেছিলেন, পরে সেটি প্রত্যাহার করেন। সরকার গরীবদের কাছে ২ হাজার টাকা দান-খয়রাত নিয়ে চলতে পারে না। যেখানে ১০ শতাংশ ধনীর হাতে মোট সম্পদের ৩৫ শতাংশ রয়েছে। কর আদায় বাড়াতে সেখানে হাত দেওয়া দরকার।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এবার কঠিন সময়ে বাজেট করতে হয়েছে। করোনার আগে অর্থনীতি ভালো অবস্থানে ছিল। করোনার ধকলও ভালোভাবে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো বিশ্বকেই নাড়া দিয়েছে। যুদ্ধের তাপের চাইতে রাজনৈতিক তাপ বেশি অনুভব করতে হয়েছে নানামুখী নিঃশব্দ নিষেধাজ্ঞার কারণে। সমালোচনা থাকলেও বাজেটে নানা ভালো দিক রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতার অংক ও সংখ্যা দুটোই বাড়ানো হয়েছে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করি।

 

তিনি আরও বলেন, করজাল বাড়াতে এজেন্ট নিয়োগ ভালো আইডিয়া। সমস্যা হচ্ছে নতুন কিছু শুনলে আমরা কেঁপে উঠি। যাকে-তাকে তো কর এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া হবে না, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সারা দেশে একযোগে এজেন্ট নিয়োগ না দিয়ে বিভাগীয় শহরে ১-২ বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা যায়। ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এটাকে তো আয়কর বলা হয়নি, আর সবাইকে দিতেও হবে না, ৩৮টা সেবা নিতে দিতে হবে। ভ্যাটের মতো এটিও রাজস্ব আদায়ে গেম চেঞ্জার হতে পারে। ধনীদের সারচার্জে ছাড় দেওয়া হয়েছে, এটা রিভিউ করা উচিত বলে মনে করি।