বিসিসি নির্বাচন: বুকে বুক মিলিয়ে এক মঞ্চে হাসনাত-খোকন

বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় না গেলেও বিভাগের ৫ জেলার (বরিশাল জেলা ব্যতীত) সমন্বয়ে বিশেষ বর্ধিত সভায় গিয়েছেন সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরিনায়াবাত)।

আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে বরিশালের গৌরনদী পৌরসভা প্রাঙ্গণে এই বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়।

শনিবার (০৩ জুন) বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল সিটি নির্বাচনের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির টিম প্রধান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।

এর আগে গত ২৬ মে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরিনায়াবাতের অনুপস্থিতিতে একই বিষয়ে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায়ও সভাপতিত্ব করেন আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খোকন সেরিনায়াবাতের বড় ভাই এবং বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা।

সভা শুরুর আগে বরিশাল থেকে গৌরনদীর সভাস্থলে পৌঁছানোর পর দুই ভাই বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেন এবং সকল ভেদাভেদ ভুলে দুজনই নৌকাকে জয়ী করার আহ্বান জানান। পরবর্তীতে দুই ভাই সভামঞ্চে পাশাপাশি চেয়ারে বসেন।

তাদের পাশেই সভামঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় টিমের সমন্বয়ক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু প্রমুখ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বরগুনার সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, আ স ম ফিরোজ, সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিভাগের ৫ জেলার বিভিন্ন ইউনিটের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমে একযোগে কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের শপথ করান কেন্দ্রীয় টিমের প্রধান ও নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ১২ জুনের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে হবে। এজন্য বরিশাল নগরের প্রত্যেক ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের মনজয় করে ভোট চেয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সকল মতভেদ ভুলে আগামী ১২ জুন নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতকে বিজয়ী করে ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ। আপনাদের হাতে আামার স্নেহের ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে তুলে দিলাম।

এ সময় তিনি ছোট ভাইয়ের হাত উঁচিয়ে ধরেন। নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত তার বক্তব্যে সব ভেদাভেদ ভুলে নৌকাকে জয়ী করতে সবার কাছে ভোট চান।

এ সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, কেউ যদি দলের সাথে বেইমানি করে দলে তার কোনো জায়গা হবে না। বেইমানদের সাথে কোনো আপস হবে না। আর ভালো কাজ করলে ফুলের মালা পরানো হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণায় নামলে পরাজয়ের বিন্দুমাত্র কারণ নাই।

এই সভার মধ্য দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগে বিভক্তিসহ নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে। তরুণ ভোটার আছিয়া আক্তার বলেন, আজকের সভায় হাসনাত ভাইয়ের পাশে খোকন ভাইয়ের বসাটা বলে দিচ্ছে, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে আটঘাট বেঁধেই দৃশ্যত মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুই ভাইয়ের মান অভিমান নিয়ে যখন আলোচনা-সমালোচনা, তখন এই দৃশ্য সেইসব কিছু ফিঁকে করতে নিঃসন্দেহে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে ভোটারদের মাঝে।

গত ১৫ এপ্রিল মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)-এর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর ১৯ এপ্রিল সংসদ ভবনের বাসভবনে গিয়ে বড় ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন খোকন সেরনিয়াবাত। এরপর ২০ এপ্রিল খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে এলেও হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কাউকেই পাশে পাননি তিনি।