তত্ত্বাবধায়ক মারা গেছে, কারো ফরমায়েশে নির্বাচন হবে না: কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরে গেছে আদালতের রায়ে। এটাকে আর জীবিত করে লাভ নেই।

নির্বাচন হবে নির্বাচনের জন্য। বাংলাদেশে কারো ফরমায়েশে নির্বাচন হবে না। ’
রোববার (২৩ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দুনিয়ার সব দেশে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া ইলেকশন হয়। বাংলাদেশে কেন ইউরোপ-আমেরিকার নেতারা আসে। আমি জিজ্ঞেস করি, আপনাদের কোন দেশে তত্ত্বাবধায়কে ভোট হয়েছে? ইউরোপও বলতে পারেনি, আমেরিকাও বলতে পারেনি। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ভোট করব। এ প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারি। গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলব পর্যবেক্ষক দিয়ে এই ভোট পর্যবেক্ষণ করুন।
বিদেশিদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন দেখলেন। এটা মাইনর সিট অথচ পাঁচটি সিটিতে একমাস হয়নি ইলেকশন হলো শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু। ওই নির্বাচনে ৫০ থেকে ৫৩ পার্সেন্ট ভোট পড়ল।

বিএনপিকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আরেকবার ক্ষমতায় গেলে এরা আবারও হাওয়া ভবন করবে। গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার আদর্শ, দেশের উন্নয়ন গিলে খাবে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ গিলে খাবে। এই দলের কাছে গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, আইনের শাসন, দেশের নিরাপত্তা, নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা নিরাপদ নয়। বিএনপি মানে ভোট চুরি, ভোট জালিয়াতি, বিএনপি মানে ভুয়া ভোটার তালিকা। বিএনপি নালিশ পার্টি। এখন দেখছে নালিশ করতে করতে আর কাজ হচ্ছে না। এখন বিএনপি খাই-দাই পাটি। ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে, বেপরোয়া হয়ে গেছে। বিএনপির এখন ক্ষমতার দরকার নেই। তাদের লক্ষ্য একটাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, কোম্পানীগঞ্জের সিরাজপুর ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নেতাকর্মীদের মওদুদ বলেছিলেন, ভোট কি এখনো শেষ হয়নি। বিএনপি বাংলাদেশে এ ভোট করেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি বিদেশির কাছে নালিশ করতে করতে কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ইউরোপ-আমেরিকা এসেছে। বিএনপি ভেবেছে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এই সরকারকে বিদায় দেবে। পাইলেন কি ঘোড়ার ডিম। ইউরোপ-আমেরিকা কি দিল। এখন বিএনপি নেতাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। নেতারা মুখে বলে না,পত্রিকায় গালিগালাজ করেন। নোয়াখালীতে বিএনপির নেতারা এসে প্রধানমন্ত্রী এবং আমাকে নিয়ে ফখরুল নিজে ও তার নেতারা গালিগালাজ করেছে। ফখরুল একজন শিক্ষক হয়ে এত খারাপ কথা, এত নোংরা কথা তার মুখ দিয়ে কেমন করে বের হয়।

উন্নয়ন নিয়ে বিএনপি নেতাদের ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছে ভোট দিলে এখন আওয়ামী লীগই জিতবে। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ লোক শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আমি যা বললাম, বাস্তবে সেটা দিনক্ষণ লিখে রাখুন। কিছু তো দেখেন না। উন্নয়ন দেখেন না। নিজেরা তো কিছু করতে পারেন না। শেখ হাসিনা করেছেন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল। দেখলে বিএনপি নেতাদের বুকের জ্বালা বাড়ে।

আ.লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, নিজেদের আচরণ সংযত করুন। শেখ হাসিনা উন্নয়ন করেছে আপনারা ভালো আচরণ করুন মানুষের সঙ্গে। ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। ক্ষমতা চিরদিন থাকে না।

নেতাকর্মীদের স্লোগানের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, আমি একটা স্লোগান শুনেছি। এ স্লোগান যেন আর না শুনি। রক্তের বন্যা মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান না। ভেসে যাবে অন্যায়। এ স্লোগান কেন আমরা দেব, কি প্রয়োজন। রক্তের বন্যা আমরা বহাতে যাব কেন। আমরা শান্তি চাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। তবে যে আগুন নিয়ে আসবে সে হাত গুঁড়িয়ে দেবেন। যে হাত ভাঙচুর করতে আসবে সে হাত আমরা ভেঙে দেব। আমরা আক্রমণকারী হব না। আক্রান্ত হলে পালটা জবাব দেব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আগামী ২৭ জুলাই ঢাকাতে বিএনপির মহাসমাবেশ এ নিয়ে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আমাদের আগস্ট মাস, সেপ্টেম্বর মাস, জুলাইয়ের বাকি কয়দিন ও অক্টোবর মাস নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি জাতীয় উন্নয়ন শোভাযাত্রা।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন।

এসময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, বসুরহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মির্জা।