উজানের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ব্রহ্মপুত্রসহ কুড়িগ্রামের সবগুলো নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এতে জেলায় এ বছর তৃতীয় দফায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শনিবার দুপুরে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার রাজারহাট ও উলিপুরের বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আশ-পাশের গ্রামগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
এদিন বেলা ১২টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্ট বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নতুন জেগে উঠা মুসার চর ও বালাডোবার চরের ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় প্রায় এক হাজার মানুষ এবং থেতরাই ইউনিয়নের চর রামনিয়াসা, জুয়ানসতরা, গড়াই পিয়ার, খারিজা নাটশালার প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াসাম, চর খিতাবখা, চর নাকেন্ডায় ৪ হাজার মানুষ ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ, আনন্দবাজার, চতুড়া, রামহরি ২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নাগেশ্বরী নুনখাওয়া ইউনিয়নের গরু ভাসার চরের সাবেক ইউপি সদস্য মো. তাজেল উদ্দীন বলেন, গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গরু ভাসার চর, কাঠগিরির চর, মাঝেরচরের প্রায় ২০টি বাসায় পানি উঠেছে। ইতোমধ্যে নুনখাওয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. তাইজুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি গত দুইদিন থেকে বাড়ছে। এতে তিস্তা তীরবর্তী নয়টি ওয়ার্ডের কিছু অংশ এবং চর বিদ্যানন্দ, আনন্দ বাজার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে তিস্তার পানি বাড়ায় বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ২ হাজার মানুষ পানিবন্দ হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও অন্যান্য নদ-নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে রাজারহাট উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন এবং উলিপুরের একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গো খাদ্য ক্রয় বাবদ পাঁচ লাখ টাকা নগদ মজুত আছে।