নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন কোচিং ব্যবসায়ীরা: সংসদে শিক্ষামন্ত্রী

songsod
ফাইল ছবি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দাবি করেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। নোট-গাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত কিছু শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত। বাণিজ্য বন্ধ হবে এমন আশঙ্কায় ইচ্ছাকৃতভাবে তারা এটা করছেন।

রোববার জাতীয় সংসদে ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দীপু মনি এ কথা বলেন। এর আগে বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন।

উত্তরে দীপু মনি বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখা হয়নি, বিষয়টি একেবারেই সত্য নয়। আগে শুধু ষাম্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা হতো। বরং এখন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থী কী শিখছে, কেমন করে শিখছে, সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে কিনা তার সবকিছুর মূল্যায়ন হয়।

তিনি আরও বলেন, নতুন যে কোনো কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক রকম বাধা থাকে, যার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, গুটি কয়েক অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপওয়ার্ক, গুগল থেকে দিচ্ছে। শুধু বই নয়, এখন নানারকম সোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য নেবে। সেগুলো নিয়ে গ্রুপওয়ার্ক করবে এবং উপস্থাপন করবে।

আন্দোলনকারীদের পেছনে কিছু শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েক জায়গায় মানববন্ধন দেখেছি। তদন্ত করেছি। সেখানকার স্কুলগুলো জানিয়েছে এই অভিভাবকরা তাদের অভিভাবক নন। তারা মূলত কোচিং ব্যবসায়ী ও নোট-গাইড ব্যবসায়ী। তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, তাদের ব্যবসা হয়তো উঠে যাবে। হাতে-কলমে লিখে লিখে পরীক্ষা রাখার অর্থই হচ্ছে, আমরা কোচিং ব্যবসাটা চালু রাখতে চাই।

নতুন শিক্ষাক্রমে ইতোমধ্যে ফল পাওয়া শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের যেটা দরকার শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা সেই দক্ষতাটা পাচ্ছি। তারা কিন্তু অনেক কিছু লিখছে। এখন একটা কিছু লিখতে দেন, লিখে দিতে পারে। বলতে দেন, বলতে পারে। বানিয়ে দিতে বলেন, বানিয়ে দিতে পারে।

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কারণ উলে­খ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বমানের যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়, সেখানে তফাতটা কোথায় এটা নিয়ে বারবার আলাপ হয়েছে। সফট স্কিলের জায়গায় আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। আমরা কমিউনিকেট করতে পারছি না। আমাদের সূক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা, সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা, যৌথ প্রচেষ্টার দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা-এই কাজটি এখন একবারে শৈশব-কৈশোর থেকে রপ্ত করবে। সেটা না করলে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেগুলোকে ক্যাপসুল আকারে গিলিয়ে খাওয়াতে দিলে সম্ভব হয় না। এর জন্য নতুন শিক্ষাক্রমে এই বিষয়গুলো শেখানো হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডিম ভাজি ও আলু ভাজি করে আনার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে দীপু মনি বলেন, ডিম ভাজি আলু ভর্তার কথা প্রায়ই বলা হচ্ছে। এটি একেবারেই অপপ্রচার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২১টি অধ্যায় আছে। এর মধ্যে জীবন-জীবিকার একটি অধ্যায় হলো রান্না। সেই রান্নাটি কেন? আমাদের শিক্ষার্থী দেখে বাড়িতে মা কিংবা অন্য কোনো একজন রান্না করে। সেই বিষয়টি যে জরুরি সে তা শেখে না। একজন মানুষ যখন রান্না করবে সে রান্নার বিষয়টি চিন্তা করবে। ১২১টি অধ্যায়ের মাত্র একটি এবং সারা বছরে একদিন মাত্র বিদ্যালয়ে পিকনিক করে রান্নাটা দেখবে। এটা বাড়িতে নয়, যেটা বাড়িতে দেওয়া হচ্ছে সেটা শিক্ষকের না বোঝার ফল। সে জন্য শিক্ষকদের বারবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।