বার্মিংহামের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন ইতিহাস সৃষ্টির পথে দক্ষিণ আফ্রিকা?

১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। ২১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রান, হাতে নেই কোনো উইকেট, অজিদের হয়ে বল করেন ডেমিয়েন ফ্লেমিং।

প্রথম দুই বলে চার মেরে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ল্যান্স ক্লুসনার, চার বলে তখন দরকার মাত্র ১ রান, তিন নম্বর বলটি কোনো রান এলো না, চার নম্বর বলে ব্যাট লাগিয়েই দৌড়ে রান নিতে অপরপ্রান্তের দিকে ছুটে চলেন ক্লুসনার।

কিন্তু ওপাশে থাকা অ্যালান ডোনাল্ড বুঝে ওঠতে পারেননি, যখন বুঝে দৌড় দিয়েছেন ততক্ষণে বল মার্ক ওয়াহ, ফ্লেমিংয়ের হাত ঘুরে চলে গেছে উইকেটেরক্ষক অ্যাডাম গিলক্রিস্টের হাতে। রান আউট হলেন ডোনাল্ড, ম্যাচ টাই হলো, সুপার সিক্সে দক্ষিণ আফ্রিকার আগে থাকায় ফাইনালে পৌঁছে গেল অস্ট্রেলিয়া।

বার্মিংহামের মতোই প্রোটিয়াদের এমন ট্র্যাজেডির শিকার হতে হয়েছে সিডনি ও ডারবানেও। কখনো বৃষ্টির বাধায় কখনো ভাগ্যের পরিহাসে, বারবার সেমিফাইনালে খেলেও একবারও যাওয়া হয়নি ফাইনালে। ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭, ২০১৫-এর পর আরও একবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের শেষ চারে দক্ষিণ আফ্রিকা। বারবার সেমি থেকেই বিদায় নেওয়ায় চোকার তকমা জুটে যাওয়া প্রোটিয়াদের নিয়ে এবারও আলোচনা হচ্ছে— পারবে তো ওরা?

এবারের বিশ্বকাপে ভারতের পর সব থেকে ধারাবাহিক দলের একটি দক্ষিণ আফ্রিকাই। আসরের সব থেকে বড় দলীয় সংগ্রহ গড়েছিলেন প্রোটিয়ারাই। ৯ ম্যাচের সাতটিতেই জিতে দ্বিতীয় দল হিসেবে নিশ্চিত করেছে সেমিফাইনাল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অঘটনের ম্যাচে পরাজিত হলেও প্রত্যাবর্তন করেছে দারুণভাবেই। শিরোপার দৌড়ে তাই অন্যতম ফেভারিট এবার আফ্রিকার দেশটিই।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া এবার আসর শুরুই করেছিল হার দিয়ে। প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে পরাজয়। পরের ম্যাচে এই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আবার হার। টানা দুই ম্যাচে অজিদের পরাজয়ে অনেকে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে রাজকীয় প্রত্যাবর্তনই এর পর হয়েছে প্যাট কামিন্সের দলের, জিতে নিয়েছে পরের সাত ম্যাচের সবকটিই। টানা জয়ের ধারায় তৃতীয় দল হিসেবে শেষ চার নিশ্চিতের পর আজ টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মাঠে নামছে তারা।

প্রোটিয়াদের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ইতিহাস যত বেদনারই হোক না কেন, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডের মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকাই। অজিদের বিপক্ষে ১০৯ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ৫৫টিতে যেখানে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৫০টি। আজ সেমির লড়াইয়েও কি এগিয়ে থাকতে পারবেন প্রোটিয়ারা? নাকি আরও একবার পুড়তে হবে আক্ষেপের অনলে?