মাত্র ১০ মিনিট সময় বিলম্ব হওয়ায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় বসতে পারলেন না ভোলার চার পরীক্ষার্থী। দেরি করে হলে প্রবেশ করলেও দায়িত্বরত পরীক্ষা কমিটির শিক্ষকদের আপত্তিতে তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। এতে ওই পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রের বাইরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
পরীক্ষা শুরু সকাল ১০টায়। কিন্তু সড়কে পরীক্ষাকালীন যানজটের কারণে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে প্রায় ১০ মিনিট দেরি হয়।
এ বছরই বয়সের কারণে অনেকরই শেষবারের মতো সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে এমন ঘটনা যেন ক্রিকেটের ‘টাইম আউট’-এর মতো— অনেকটা পরীক্ষার হল থেকেই আউট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নজরুলনগর ইউনিয়ন থেকে সকাল সাড়ে ৬টায় বাসে রওনা দেন নাজনিন নাহার ঝুমু। লক্ষ্য ছিল সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে চাকরি পেয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। পরীক্ষাকালীন শহরে হঠাৎ যানজটের কারণে ভোলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হতে সময় লাগে ৯.৪০ মিনিট। পরে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রবেশ করতে যান হলে।
কিন্তু হলে প্রবেশ করার আগেই পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তারা ১০ মিনিট দেরিতে আসায় তাকে বের করে দেন। এর পর নাজনিনের আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।
শুধু নাজনিন নয়, একই সময় বোরহানউদ্দিনের হাবিবা, জেরিন ও দৌলতখান থেকে পরীক্ষা দিতে আসা লিপি আক্তারকেও পরীক্ষা দিতে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমন ঘটনার পর সবাই পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদের কেউ কেউ এবারই শেষবারের মতো প্রাইমারি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিল। কিন্তু ১০ মিনিটের আক্ষেপ আজীবন থেকে যাবে তাদের।
ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সফিকুল ইসলাম জানান, চারজন নাকি দুজন, না একজন— তা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের সরকারি নির্দেশনা আছে পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে আসন গ্রহণ করতে হবে এবং সকাল সাড়ে ৯টার পর ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কেউ পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না, বের হতে পারবে না। সুতরাং কেউ পরীক্ষা দিতে আসছে পরে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে— এমন কোনো তথ্য নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভোলা জেলা প্রশাসক আরিফুজ্জামান। তিনি বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০ মিনিট দেরি করে এলেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল। আমাকে যদি আগে বিষয়টি জানানো হতো, তা হলে কোনো কিছু করা যেত। যেহেতু আমাকে পরে জানানো হয়েছে, সেহেতু এখন আর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নেই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভোলা জেলার সাত উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ৩৫০ শূন্যপদের বিপরীতে প্রায় ১৬ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী ৩০ কেন্দ্রে লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।