এই সম্মেলন না হলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত: রওশন এরশাদ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেছেন, আজ যদি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম।

দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই তার প্রতিফলন ঘটেছে।
শনিবার (০৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, আজ আমার রাজনৈতিক জীবনের এক ঐতিহাসিক দিন। আমার গড়া প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি- এই রকম একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছে দেখে- আমার হৃদয়ের কানায় কানায় আনন্দ ভরে গেছে। এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য জাতীয় পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আজ যদি এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত।

রওশন বলেন, পল্লীবন্ধু এরশাদ এদেশে যে নতুন ধারার ইতিবাচক রাজনীতির প্রবর্তন করে ছিলেন সেই রাজনীতি হারিয়ে যেতে বসেছিল। আজ এই দশম সম্মেলনের মাধ্যমে পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি-আদর্শ এবং উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ও সংস্কারের রাজনীতি পুনঃ:প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের মনে আবার আমরা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এই সম্মেলনের মাধ্যমে।

তিনি বলেন, আমরা অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এখনও টিকে আছি। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর যখন একটু ঘুরে দাঁড়ালাম, তখন আমাদের দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। মাননীয় আদালতের সুবিচারে পল্লীবন্ধু এরশাদ এবং আমি রওশন এরশাদ লাঙ্গল প্রতীক জাতীয় পার্টির জন্য বরাদ্দ পেয়েছিলাম। সেই লাঙ্গল প্রতীক এখনো আমাদের জাতীয় পার্টির অনুকূলে আছে এবং আগামীতেও থাকবে ইনশা আল্লাহ।

কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে রওশন এরশাদ বলেন, আপনাদের স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই পল্লীবন্ধু এরশাদের জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নাই। আমরা এক আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। অতীতে যারা পার্টি ছেড়ে গেছে তারা কেউ পল্লীবন্ধু এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যায়নি। এমনকি তারা পল্লীবন্ধুর ছবিও সঙ্গে নেয়নি। তাই জাতীয় পার্টি কখনো ভেঙেছে, তা আমি মনে করি না।

তিনি যোগ করেন, আজ আমি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে এরশাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত নেতাকর্মীদের সবার প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন আমরা সবাই জাতীয় পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হই। দেশের রাজনীতিতে একটা সুষ্ঠুধারা বজায় রাখার জন্য জাতীয় পার্টির আর কোনো বিকল্প নাই। কারণ, দেশবাসী একটি শক্তিশালী ও সুসংগঠিত জাতীয় পার্টি দেখতে চায়। আসুন আমরা সবাই একত্রিত হয়ে জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং আপামর জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করি। নেতৃত্ব এবং কর্তৃত্ব আয়ত্তে রাখার লোভে কেউ আলাদা না থাকি।

এরপর এরশাদপত্নী বলেন, আমি পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে পার্টির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রস্তাব রেখেছি। জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র চর্চার একটা নিদর্শন আমরা সৃষ্টি করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের সম্মেলনের বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক গঠিত গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটি গঠনতন্ত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আনবে। আপনারা পাস করে দিলে তা জাতীয় পার্টির আইনে পরিণত হবে।

পরে তিনি জাতীয় পার্টির সম্মেলন বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশনের কাছে কাউন্সিলের দায়িত্ব অর্পণ করে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।

এর আগে শনিবার (৯ মার্চ) রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একাংশের জাতীয় সংগীত এবং দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়।

শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মৃধা।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় পুরো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটসহ মৎস্যভবন এবং শাহবাগ এলাকা।

নানা রংবেরঙের পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে সম্মেলনস্থল, সড়কদ্বীপগুলোতে লাগানো হয়েছে এরশাদ শাসনামলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন।

নির্মাণ করা হয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট মঞ্চ। ১২ হাজারের কাউন্সিলর এবং ডেলিগেট উপস্থিতির লক্ষ্য চূড়ান্ত করে সম্পন্ন করা হয়েছে সকল আয়োজন।

প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে এতে সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সাবেকমন্ত্রী এবং জাপার একাংশের মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএ মতিন, বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ প্রমুখ।