দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর বেনাপোল দিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শুল্ক ফাঁকি

দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর বেনাপোল দিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে ম্যানেজ করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য চালানের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা আবারও শুরু হয়েছে। কাস্টম শীর্ষ কর্মকর্তারা এই শুল্ক ফাঁকিতে সহযোগিতা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। বিশেষ করে বর্তমান কমিশনার আব্দুল হাকিম বেনাপোল কাস্টম হাউজে যোগদানের পর থেকে শুল্ক ফাঁকির প্রবণত বেড়েই চলেছে। একই সময়ে জেসি সাফায়েত এবং জেসি হাফিজুর রহমান যোগদানের পর থেকে বেনাপোলে বন্দরে তোঘলকি কারবার শুরু হয়েছে। যার কারণে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। বিশেষ করে ফল আমদানিতে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যপক ছাড় দিয়ে আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং কমিশনার ও দুই যুগ্ম-কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কাস্টম কর্মকর্তারা রাতারাতি আঙুল ফুঁলে কলাগাছ হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ। নিজেদের জাহির করতে সাধারন ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রাণি করে বেনাপোল বন্দরকে জিম্মি করে রেখেছেন কাস্টমসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের পিষ্টপোষকতায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকৃত ট্রাক ট্রাক পণ্য চালান বেরিয়ে যাচ্ছে বন্দর থেকে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বেনাপোল বন্দরে ৪০ দিন ধরে পড়ে থাকা। গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিষটি জানাজানি না হলে ভারতীয় পণ্যবোঝাই এই ট্রাকটিতে আসা পণ্যও বেরিয়ে যেতো সব ঘাট ম্যানেজ করেই। বিগত ৪০ দিনেও কেউ জানেন না ট্রাকটির মধ্যে কী পণ্য আছে। এর মালিকানাও দাবি করছেন না কেউ। ট্রাকটিতে ৫১১ কার্টন আইপিএস, ইউপিএস রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে পণ্য খালাসে আমদানিকারকের পক্ষে কোনো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এখনো কাগজপত্র কাস্টমসে দাখিল করেননি। বর্তমানে ভারতীয় ট্রাকটি বন্দরের ৩৬ নম্বর শেডের সামনে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রাকটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে, সাধারণত একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি ট্রাকটি গ্রহণ করে কাস্টমস কার্গো শাখায় তার তথ্য এন্ট্রি করেন। পরে বন্দরের রেজিস্টারে পণ্যাগারের নাম উল্লেখ করে সেই পণ্যাগারে পণ্য খালাস করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে (ডব্লিউবি-১১-বি-৬৩৬৬) নম্বরের ট্রাকটি নিয়ম না মেনে বন্দরের ৩৬ নম্বর পণ্যাগারের সামনে অবস্থান করে।

এরমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর যায়, ট্রাকটি আমদানি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বা বড় ধরনের অনিয়ম করার চেষ্টা করছে। এরপর থেকে ট্রাকটি সিসি ক্যামেরা ও বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়। এ বিষয়ে বন্দর কতৃপক্ষ নাকি কাস্টম কতৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।

আমদানিকারক এবং সিএ-এফ এজেন্টরা বলছেন, ট্রাকটিতে কী আছে আর কেন এতদিন এটি বন্দরে পড়ে আছে, তা নিয়ে কৌতূহল ও ভীতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত কেউ ট্রাকটির মধ্যে থাকা পণ্যের মালিকানা দাবি করেননি। বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল সিরাজী বলেন,পণ্যবাহী ট্রাকটির আমদানিকারক ঢাকার টিআর অটোমোবাইলস। ট্রাকটিতে ৫১১ কার্টন আইপিএস, ইউপিএস ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ পণ্য চালানটির মালিকানা দাবি করেননি। পরবর্তী পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত কেউ যাতে ট্রাকটি খালাস না করেন বা সরিয়ে না নেন, সেজন্য বন্দরের সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে এটি রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ট্রাকটি বন্দরে কোথাও এন্ট্রি না করে প্রবেশ করে। ট্রাকটিতে কী আছে তা এখন পর্যন্ত খুলে দেখা হয়নি। ট্রাকটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, একমাসের মধ্যে পণ্যের চালান বন্দর থেকে খালাস না হলে তা নিলামের তালিকায় তোলা হয়। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ তালিকা দিলে কাস্টমস সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও সে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না করায় নানান অভিযোগ বন্দর জুড়ে ঘুরে ফিরছে। বেনাপোল কাস্টম কমিশনারের নিদের্শেই এই স্টিম রোলার চলে।

কিন্তু এইচএসকোড পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিলে তখন সংশ্লিষ্ট কর্তারা অদৃশ্য কারনে নীরব ভুমিকা পালন করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে কাড়ি কাড়ি টাকার হাত বদলে কমিশনার এবং দুই জেসিসহ সংশ্লিষ্টরা নিরব ভূমিকা পালন করেন। এই ধারাবাহিকতায় ভারত থেকে আসা অনেক পণ্য চালান শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে টাকার পাহাড় গড়ছেন সংশ্লিষ্ট উভয়পক্ষ। বেনাপোল বন্দরে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য চালান বের করে দেয়ার বিনিময়ে কর্তাদের সাথে নাকি ব্রিফকেসের হাত বদল হচ্ছে। এসব বিষয়ে এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেক বার অবহিত করানো হয়েছে কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা নির্দেশ দিলেও বেনাপোলের কাস্টম হাউজের সংশ্লিষ্টরা কর্তারা সেটি মানেন না। তারা এনবিআরের শীর্ষ কর্তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেদের পকেট ভরেন। তাই নির্দেশ আসে একরকম আর বাস্তবে করা হয় তার উল্টেটা। এতে শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্র এবং তাদের সহযোগিতা কাস্টম কর্তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। এনবি আর তথা সরকার হারাচ্ছে শত-শত কোটি টাকার রাজস্ব। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও কোন উত্তর মেলে না। কমিশনার আব্দুল হাকিমের মুঠো ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। এমন কি খুদে বার্তা দিলে দেখোর পরও তিনি কোন উত্তর দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না