তীব্র তাপদাহে পুড়ছে গোটা দক্ষিনাঞ্চল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি

দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ৬৪ বছরের মধ্যে এটাই দেশের এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডের পরিমান। তবে পরিস্থতি এই অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে এই রেকর্ডও অতিক্রম হয়ে যেতে পারে।

 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা যশোরে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক সাংবাদিকদের বলেন, আজ যশোরে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

 

তিনি আরও জানান, আজ চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দক্ষিনের জেলা খুলনায় তাপমত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি আর সাতক্ষীরায় ছিল ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর উত্তরের জেলা পাবনার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

এই অবস্থায় আজও যশোরসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের জেলা ও উপজেলা এবং গ্রামাঞ্চলের সর্বোত্র। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। বিশেষ করে রিকসা শ্রমিক, দিনমজুর,কৃষি শ্রমিক থেকে শুরু করে দৈনিক ভিত্তিক মজুরীর শ্রমিকরা নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সকালে সূর্য্য ওঠার পর থেকেই তাপদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মারাত্মক আকার ধারন করছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার সময় যশোর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে এই অবস্থা আরো ২/৩ দিন অব্যাহত থাকবে। তবে আগামী শুক্রবারের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিকত হতে পারে।

 

বৃষ্টির বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়, আগামী ২ থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলেই যে তাপমাত্রা অনেক কমে যাবে, বিষয়টি তা নয় বলেও উল্লেখ করেন এক কর্মকর্তা।

 

এর আগে দুপুর ২টার সময় চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আগের দিন এই তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

আবহাওয়াবিদরা বলছেন,৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ু সংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে।

 

চলমান তাপপ্রবাহ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, বাংলাদেশে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রার গরম অনুভূত হচ্ছে। যে কারণে সাধারণের অস্বস্তিও বেশি।

 

যশোরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি

 

গোটা এপ্রিল মাস জুড়েই তীব্র তাপে পুড়েছে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের জেলা যশোর। মাসের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে এই জেলায়। যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতেই ভেঙে গেলো চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সব রেকর্ড। খুলনা আবহাওয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। একই সাথে গত ৬৪ বছরের ইতিহাসে এটাই দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা

 

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, আজ যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.৭ ডিগ্রি, ঈশ্বরদীতে ৪৩.২ ডিগ্রি ও রাজশাহীতে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর খুলনায় ৪২ এবং সাতক্ষীরায় ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল হয়ে পড়েছে সব শ্রেণিপেশার মানুষের জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেও জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বের হতে হচ্ছে তাদের।

 

শহরের মনিহার এলাকায় এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক কেনা মিয়ার সাথে। তিনি বলেন,খুব গরম। রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে শরীর মনে হয় পুড়ে যাচ্ছে । সকাল থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত তেমন একটা আয় হয়নি। লোকজন তেমন রাস্তায় নেই। মালিককে দিতে হবে ২৫০ টাকা। আয় হয়েছে মাত্র ২০০ টাকা। বয়স ভারী হয়েছে তাই গরমে বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারি না। এদিকে শহর ও শহরতলীতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গরীব অসহায় দিন মজুর মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন সাধারণরা। তারা তালপাতা রোদ নিবারণের জন্য মাথায় ছাতা সরবরাহ করছেন। কোথাও কোথাও ঠান্ডা পানি শরবত দিচ্ছেন রোদে ঘামা মানুষদের মাঝে। রাস্তায় বিশেষ ব্যবস্থা পানি ছিটানো হচ্ছে রাস্তা ঠাণ্ডা করার জন্য।

 

এদিকে, তাপজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেকে হাসপাতালে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি- কাশি, টাইফয়েড নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এসব রোগীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে তাপপ্রবাহ থেকে সুস্থ থাকতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

 

যশোর মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ডা.আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, এই সময়ে ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, পক্স, হিট স্ট্রোক, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি। প্রচ- গরম থেকে মুক্তি পেতে কেউ যেন ডিপ ফ্রিজের পানি পান না করে। এ সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি, দেশি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। দিনমজুর বিশেষ করে কৃষকরা যেন সকাল ১১টার মধ্যে এবং বিকালে তাপমাত্রা কমলে মাঠের কাজ করেন সেই পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।

 

এদিকে চরম বৈরী আবহাওয়ার কারনে চরম বিপাকে পড়েছেন যশোরের মৎস্য হ্যাচারীর মালিক শ্রমিকরা। গত কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে বিভিন্ন হ্যাচারীতে কয়েক কোটি টাকার রেনু পোনা মাছ মারা গেছে। যশোরের বিশিষ্ট হ্যাচারী মালিক হাসান তালুকদার বলেন, তীব্র তাপদাহের কারনে এবং অসহ্য গরমের কারনে মাছের রেনু পোনার এই ভরা মৌসুমে তারা হাতপা গুটিয়ে বসে আছেন। হ্যাচারীর কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। পুকুর, খাল বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পোনা মাছের চাষও ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে রেনু পোনার।

 

তীব্র তাপদাহে যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে বিরাজ করছে শুনসান নীরবতা। সকাল থেকে বন্দরে কর্মকান্ড শুরু হলেও বেলা ১১টার দিকে সব শেড ফাকা হয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারনে হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা পণ্য লোড আনলোড বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে বাগেরহাটের মংলা ও যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।ব্যাহত হচ্ছে বোরো ধান সংগ্রহ।

 

এদিকে প্রচন্ড তাপদাহের কারনে চলতি মৌসুমের বোরো ধান সংগ্রহ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠের শতকরা ৬৫ ভাগ বোরো ধান পেকে গেছে। দ্রুত এই ধান কেটে মাঠ থেকে কৃষকের ঘরে না তুলতে পারলে যে কোন সময় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের লালদিঘীর পাড়, পাঁচবাড়িয়া হাসিমপুর, চাড়াভিটা, বসুন্দিয়া ও রুপদিয়ায় জন বিক্রির হাটে শ্রমিক সংকট বিরাজ করছে। যেখানে ভরা মৌসুমে এসব হাটে দিন মজুর শ্রমিকরা তাদের শ্রম বিক্রির জন্য ভিড় করে এবার সেই সময় এসব হাটে কোন শ্রমিকের দেখা মিলছে না। যা ২/১ জন পাওয়া যাচ্ছে তাদের ডিমান্ড গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে দ্বিগুন। ফলে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কেটে ঝেড়ে ঘরে তুলতে পড়েছেন চরম বিপাকে। এদিকে মাত্রাতিরিক্ত গরমে এবং পানি সংকটের কারনে যশোরের ফুল ও সবজি চাষ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক।