যশোর সরকারি মহিলা কলেজ প্রধান সহকারীর অনিয়ম-দুর্নীতি

Jessore map

যশোর সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমানের
বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কলেজের সম্পদ
চুরি, অনিয়মের মাধ্যমে ছাড়পত্র তৈরি করে (টিসি) হাজার হাজার টাকা
লেনদেন, ভূয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ শিক্ষক,
কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। তার
বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন ফল পায় না ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান সহকারী
হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে। তিনি
কলেজের সিমেন্ট চুরি করে নিজের বাড়ি নির্মাণের কাজে ব্যবহার
করেছে। কলেজের এই সিমেন্ট দিয়ে তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হয়নি। কলেজের মেহগণি গাছ চুরি করে নিজে বাড়ির ঘরের জানালা,
দরজাসহ আসবাবপত্র নির্মাণ করেছেন। কলেজ বাসের তেল চুরির সাথে
তার রয়েছে যোগ সাজস। বাসের তেল চুরির মোটা অংশ তিনি নিয়ে
থাকেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে ভূয়া বিল ভাউচারের
মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে চলেছে এই প্রধান সহকারী।
কলেজের কোন জিনিস কেনার জন্য ক্রয় কমিটি করার নিয়ম থাকলেও
তিনি ক্রয় কমিটি দিয়ে না কিনে নিজে কিনে থাকেন। কোন কোন
ক্ষেত্রে ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা উত্তোলন করে নিজের পকেটে ভরেন।
এছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে কোন
শিক্ষার্থী ভর্তি হতে হলে তার কাছে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করা
হয়। প্রধান সহকারীর চাহিদা মত টাকা দিতে না পারলে তাকে ভর্তি করা
হয় না। অনেককে ট্রান্সফার (টিসি) বা ছাড়পত্র নিয়ে ভর্তি হতে হলে তার
চাহিদা মত টাকা দিতে হয়। তার চাহিদা মত টাকা দিতে পারলে ভর্তি
হওয়া যায়।
তিনি শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ম দুব্যবহার করেন। তার
এসব বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। তিনি কলেজের
অধ্যক্ষ ছাড়া কাউকে কোন সেবা দেন না।

সরকারি মহিলা কলেজের প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমান বিভিন্ন
কলেজে চাকরি করার সময় এসব অনিয়মের কারণে তাকে একাধিকবার
বদলি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, হাবিবুর রহমান অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার
মুদ্রাক্ষরিক পদে যশোর সরকারি টিটি কলেজে প্রকল্পের কর্মচারী
হিসেবে যোগদান করেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে তদবির করে যশোর
সরকারি এম এম কলেজে ওই পদে যোগদান করেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রধান
সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে খুলনা বয়রা সরকারি মহিলা কলেজে
যোগদান করেন। সে শিক্ষার্থীদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপ করার
অভিযোগে তাকে বদলি করা হয়। সেখান থেকে যশোর সরকারি এম এম
কলেজে আবারও যোগদান করেন। এখানেও অসামাজিক কার্যকলাপ ও চুরির
অভিযোগে তৎকালীন অধ্যক্ষ তাকে কুষ্টিয়া আমলা কলেজে বদলি করা হয়।
সেখানেও একই রকম অপরাধ করার অভিযোগে তাকে এবার নড়াইল
ভিক্টোরিয়া কলেজে বদলি করা হয়। সেখানে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা
হাতেনাতে ধরার পড়ার পর আবারও বদলি করা হয়।

এরপর তিনি ২০১৭ সালে
যশোর সরকারি মহিলা কলেজে যোগদান করেন। এখানে যোগদান করে
আবারও শুরু করেন তার পূর্বের মত অনিয়ম-দুর্নীতি। প্রধান সহকারী
হওয়ার কারণে অন্য কর্মচারীদেরকে তিনি সব সময় ভয়ভীতি দেখান। কেউ
তার কথার বাইরে গেলে তার চাকরি থাকবে না বলে হুশিয়ারি দেন। ফলে ভয়ে
কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে সাহস পায় না। সরকারি কোন
কর্মচারি একই সাথে ৭ বছর থাকার কোন নিয়ম না থাকলেও প্রধান
সহকারী হাবিবুর রহমান বহাল তবিয়াতে রয়েছেন। তিনি ঢাকা শিক্ষা
ভবনের এক কর্মচারীর সহায়তায় এখানে বহাল তবিয়তে চাকরি করে
যাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, আমার
বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার কোনটাই সত্য না। সব
মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। একটি মহল আমার এই
জায়গাটি নেওয়ার জন্য এসব অভিযোগ করছে। এ বিষয়ে এমপি
সাহেবের কাছেও অভিযোগ গেছে। কিন্তু এমপি সাহেব বিষয়টি
আমলে নেয়নি।