প্রশ্ন : অমুসলিমদের কুরবানির মাংস দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান পুরুষ-নারীর ওপর কুরবানি ওয়াজিব। এটি ইসলামের মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কুরবানি অর্থ নৈকট্য। কুরবান হলো— প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
মহান আল্লাহ সুরা হজের ৩৪নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন— ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানির বিধান রেখেছি, যাতে তারা গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুগুলো জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, যা তিনি তাদের রিজিক হিসাবে দান করেছেন।’
হযরত ইবরাহীম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানির মাধ্যমে ইমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সে আদর্শ ও প্রেরণায় আমাদের জীবনকে উজ্জীবিত করাই কুরবানির মূল শিক্ষা।
আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর যুগেই কুরবানি পালিত হয়েছে। এটি ‘শাআইরে ইসলাম’ তথা ইসলামের প্রতীকী বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া গরিব-দুখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়। আমাদের আশপাশে অনেক প্রতিবেশী রয়েছে। যারা অন্য ধর্মের। এ ক্ষেত্রে অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, কুরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যাবে কিনা?
আসুন জেনে নিই এ বিষয়ে কুরআন-হাদিস কী বলে?
কোনো কোনো মুসলিমের ধারণা— কুরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যাবে না। এ ধারণা ঠিক না। কুরবানির মাংস অমুসলিমদের দেওয়া যায়। এতে অসুবিধার কিছু নেই। বিশেষত অমুসলিম যদি প্রতিবেশী হয়। কারণ প্রতিবেশী হিসেবে তার হক রয়েছে। সাহাবীরা অমুসলিম প্রতিবেশীর হকের প্রতি সবিশেষ লক্ষ্য রাখতেন।
আব্দুল্লাজ ইবনে আমর (রা.) এর বাড়িতে একবার একটি বকরি (ছাগল) জবেহ করা হলো। যখন তিনি বাড়িতে ফিরলেন জিজ্ঞস করলেন, তোমরা কি আমাদের ইহুদী প্রতিবেশীকে এ গোশত হাদিয়া (দান) পাঠিয়েছ? এভাবে দুবার জিজ্ঞেস করলেন। আমি রাসুলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি। প্রতিবেশীর অধিকার প্রসঙ্গে জিবরাইল (আ.) আমাকে অবিরত উপদেশ দিতেন। এমনকি আমার ধারণা হলো যে, হয়তো শিগগির প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবে। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৪৩)
সুতরাং অমুসলিমকে কুরবানির মাংসসহ অন্যান্য যে কোনো জিনিস দান করা যাবে। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন:
‘দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের স্বদেশ হতে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তোমাদের স্বদেশ হতে বের করে দিয়েছে এবং তোমাদের বের করার কাজে সহায়তা করেছে। তাদের সঙ্গে যারা বন্ধুত্ব করে তারা তো জালেম।’ (সুরা মুমতাহিনা ৬০:৮-৯)
উত্তর দিয়েছেন : মুফতি তোফায়েল গাজালি
মহাপরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম, উত্তরখান, ঢাকা