ফলোআপ: খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে দুনীর্তি অনিয়মের চাঞ্চল্যকর খবর

খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দুনীর্তি ও অনিয়মের খবরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে । রীতিমতো গাত্রদাহ শুরু হয়েছে এ অসাধু কর্মকর্তার। বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন আরসিফুড । সংবাদ বন্ধের জন্য দেনদরবারও করছেন।ওসিএলএসডিদের সাথে বৈঠক করে আরসিফুড ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী খুলনা বিভাগের ১০টি জেলা থেকে ওএমএস ডিলারের কাছ থেকে ও এম এস খাতে চাল ও আটা বিক্রিতে হিস্যা তুলছেন। কোন জেলায় কতটুকু চাল আটা বরাদ্দ মাস শেষে ক্যালকুলেটর টিপে তার পার্সেন্ট বুঝে নেন। গুদামের ওসিএলএসডিরা ওই টাকা কালেকশন করে আরসিফুডকে পৌঁছায় দিচ্ছেন। কোন জেলা হতে টাকা দিতে বিলম্ব করা হলে অফিসে ফোন করে ডেকে নিয়ে গুদাম থেকে প্রত্যাহার করার হুমকি দেন। এতে সর্বদাই আতংকে থাকেন গুদামের ওসিএলএসডিরা। সরকারের খাদ্য বান্ধব সময়সূচিও মুখথুবড়ে পড়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ আরসিফুডের পদটি যেন অনৈতিক টাকা আদায়ের ক্যাশিয়ারে পরিণত হয়েছে ।

সুত্র বলছে, আরসিফুড কোন এল এস ডি পরিদর্শনে গেলে ওসিএলএসডিদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকার খাম নেন। ডাক্তারদের মত এটা তার ভিজিট ফি । খাম না পেলে পরিদর্শনে খারাপ কিছু লিখে তাকে প্রত্যাহার করার ভয় দেখান। অর্থাৎ ২০ হাজার দিলে পরিদর্শন রিপোর্ট ভালো, আর টাকা না দিলে পরিদর্শন রিপোর্ট খারাপ। এছাড়া গাড়ির তেল বাবদ নেন ৮ হাজার টাকা। তার ড্রাইভার মিনহাজ কে দিতে হবে ২০০০ টাকা। না হলে তিনিও খাম ধরেন না। কোন কোন পরিদর্শনে আবার ইকবাল বাহার চৌধুরী তার স্ত্রীকে নিয়ে যান। সে ক্ষেত্রে দামী রিসোর্টে রাত যাপন । বারবিকিউ পার্টি ও শিল্পী এনে গান বাজনাসহ নানা মনোমুগ্ধকর আয়োজন করতে হয়। সেই সাথে মোঘল সম্রাটের মত খানাপিনা থাকতে হবে। ওসিএলএসডিকে নিয়ে তার স্ত্রীর জন্য শপিংয়ে যান। ভিআইপি মার্কেটে গিয়ে ২০/৩০ হাজার টাকা দামের শাড়ি ও অন্যান্য সামগ্রী কেনেন ওসিএলএসডিদের টাকায় ।

দুই মাস আগে মাগুরায় পরিবারসহ পরিদর্শনে যান ইকবাল বাহার ঠৌধুরী । রাতে থাকার জন্য মাগুরা শহরের কোন আবাসিক হোটেল তার পছন্দ হয় নিই। বেকায়দায় পড়ে যান মাগুরার ওসিএলএসডিরা। রাতে ঘুমানোর জন্য আরসিফুডসহ তার পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হয় নড়াইল জেলার চিত্রা রিসোর্টে। সেখানে মাগুরা সদর ওসিএলএসডি তরুন বালার নেতৃত্বে রিসোর্ট বিলসহ তিন লাখ টাকার দামী উপহার সামগ্রী দিয়ে বিদায় দেয়া হয়।

সুত্র বলছে, গত মাসে মহেশ্বর পাশা সিএসডির মধ্যে ইকবাল বাহার চৌধুরীর জন্মদিন পালন হয়। সেখানে খুলনা বিভাগের সকল ওসিএলএসডিরা এসে ৪টি খাশি জবাই করে জন্মদিন উদযাপন করেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে জোর পূর্বক ওসিএলএসডিদের কাছ থেকে উপহার সামগ্রী নেন আরসিফুড । ইকবাল বাহার চৌধুরী আগে থেকেই ওসিএলএসডিদের কাছে ডায়মন্ডের রিং দাবী করেন। ওসিএলএসডিরা তার জন্য ১লাখ ৮৬ হাজার টাকা দিয়ে ডায়মন্ডের রিং কিনে দেন। এছাড়া তাকে স্বণের আংটি, ২৮০০০ টাকা দামের একটি রোলেক্স (বিদেশি ব্রান্ড) ঘড়ি, ব্লেজারসহ বিভিন্ন মূল্যবান উপহার সামগ্রী দেয়া হয়।

সুত্র বলছে, গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার নাম সম্বলিত বস্তাসহ চাল বিলিবিতরন করায় যশোরের শার্শা এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। তখন যশোর জেলা প্রশাসক নাভারণ গুদাম কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার জন্য আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরীকে ফোন করেন। এরপর নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিকে আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী খুলনায় ডেকে পাঠান। প্রত্যাহারের ভয় দেখিয়ে আরসিফুড নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডির কাছ থেকে নগদ আট লাখ টাকা নিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে । ওই সময় নাভারণ খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডিকে বোরো সংগ্রহ পর্যন্ত রাখার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।

সুত্র বলছে, ওসিএলএসডিদের বদলীর ক্ষেত্রে লাগামহীন অর্থ বাণিজ্যের কারণে খাদ্য গুদাম গুলোতে প্রতিনিয়ত নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। বদলীর টাকা ম্যানেজ করতে গুদাম প্রত্যাশীরা জমি ও গহণা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ওই টাকা তুলতেই অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন ওসিএলএসডিরা।

সুত্র বলছে, গুদাম থেকে অন্যত্র চাল সরানো, অন্য স্থাপনা থেকে চাল আনা, গম আনা, এ ধরনের মুভমেন্ট এর জন্যও ইকবাল বাহার চৌধুরী টাকা ছাড়া কোন মুভমেন্ট এর চিঠি দেননা। চাল, গমের চাহিদা আরসিফুড অফিসে পাঠালেই ইকবাল বাহার চৌধুরী ৫০ হাজার টাকা নেন। আরসিফুড অফিসের বড় বাবু শাহিনকে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা।

সুত্র বলছে, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কমিশন বাণিজ্যের চাপে দিশেহারা খুলনা খাদ্য বিভাগ। রীতিমত নাভিশ্বাস উঠেছে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। আরসিফুডের লাগামহীন ঘুষ বাণিজ্যের কারণে ওসিএলএসডি’রা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন । প্রতিমাসে ঢাকায় মিটিং বাবদ আরসিফুড ওসিএলএসডিদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন। খুলনা মিটিংয়ের খরচ নেয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সুত্র বলছে, অবৈধ উপায়ে আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন । খুলনা বিভাগের ওসিএলএসডিদের থেকে কালেশনকৃত টাকা তার অফিসে বড় বাবু শাহীনের মাধ্যমে তার নিকটস্থ বিশ্বস্ত লোকের ব্যাংক একাউন্টে জমা দেয়া হয়। ব্যাংক ছাড়াও এসএ পরিবহণ , সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই টাকা পাঠাই দেন শাহীন। শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তার অবৈধ উপার্জনের হদিস বেরিয়ে আসবে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে ।

সুত্র বলছে, আরসিফুড ইকবাল বাহার চৌধুরী ঢাকার আরবান পান্থনীড়ের রোড নাম্বারঃ ১১/সি , হাউজ নম্বরঃ ৭৬ , ফ্ল্যাট নম্বরঃ ৮/ সি তে বিলাস বহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন । ঢাকার বিভিন্ন আবাসিকে প্লট ও কুমিল্লাতে নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ।

সুত্র বলছে, গত ২৩ ও ২৪ মার্চ “খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে বদলী বাণিজ্যসহ বিস্তর অভিযোগ” শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বেসামাল হয়ে পড়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার ঠৌধুরী । তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ওসিএলএসডিকে নিয়ে গোপন বৈঠক করেছেন । ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে হেনস্থা করার পরিকল্পনা করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে ।