ঈদের শেষ মুহুর্তে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার কাপড় তৈরির কারিগর তথা দর্জি শ্রমিকরা। জানা গেছে ঈদের শেষ মুহুর্তে দর্জি শ্রমিক ও ট্রেইলার্স-এর মালিকরা সার্বক্ষণিক অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। প্রতিদিন ভোর হবার পর হতে গভীর রাত পর্যন্ত তারা পোশাক তৈরি করার জন্য খাওয়ার সময়টুকু পর্যন্ত পাচ্ছেনা। তাঁরা এ সময়কে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও কাজ করতে তাঁদের থাকছে না কোন অনিহা। কারণ পরিশ্রমের পাশা পাশি শ্রমিকরা মজুরিও বেশি পাচ্ছে। যাঁর কারণে মনে প্রাণে দর্জি শ্রমিক ও টেইলার্সের মালিকরা রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে। এমনকি দর্জি শ্রমিক ও টেইলার্সের মালিকরা তাঁদের পরিবারের সাথে এই রমজান মাসেও ইফতার করার সময় পর্যন্ত পাচ্ছেনা তাঁরা।
ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকায় ঝিনাইদহ শহরের টপটেন টেইলার্সের কাটিং মাস্টার লিটন হোসেন ও দর্জি শ্রমিক মোহাম্মদ আলী জানান, নির্ঘুম রাত জেগে পোষাক তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছি আমরা। এমন দিন আছে ইফতার সময় মতো করতে পারছিনা। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার থেকে ৬ হাজারটির মত টেইলার্সের দোকান আছে।
ঝিনাইদহ জেলা শহরে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি টেইলার্সের কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্যে হলো টপটেন টেইলার্স, নাছির টেইলার্স, সাইদুল টেইলার্স, সাহেব টেইলার্স, বাদশা টেইলার্স, রাসেল টেইলার্স, মনোয়ার টেইলার্স, রহিম টেইলার্স, শতরূপা টেইলার্স, আলী টেইলার্স, বেঙ্গল টেইলার্স, সাইমুন টেইলাস, হাফিজ ড্রেস ম্যাট, নকশি টেইলাস ও বিষয়খালী বাজারের শুভ টেইলার্স।
ঝিনাইদহ শহরের রহিম টেইলার্সের স্বত্তাধিকারী আব্দুল রহিম জানান, রোজা শুরু হওয়ার পর হতে প্রতি বছরের মত এ বছরেও অগ্রিম পোশাক তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ক্রেতারা। ফলে রাত-দিন আমাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান- গার্মেন্টসের তৈরি রেডিমেট পোশাক অনেক সময় শরীরের সাথে ফিটিং না হওয়ায় টেইলার্সের তৈরি পোশাকের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে এ বছর প্যান্ট ৬০০ টাকা, শার্ট ৪০০ টাকা, স্যালোয়ার কামিজ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাকিস্তানি থ্রি-পিচ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঞ্জাবী ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, ব্লাউজ ১৫০ টাকা, বোরখা ৯০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকাই তৈরি করছে । তিনি আরো জানান, পাকিস্তানি ‘আগা-নূর’, ‘সাদা বাহার’, সারারা’, ‘গারারা’ চলতি বছর এ ড্রেস এর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই অডার নিতে হচ্ছে। আর এ ড্রেসের মুজরি রাখা হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। তবে এখন আর অডার নেওয়া হচ্ছেনা বলেও জানান তারা। এছাড়াও বিগত বছরের ‘গাউন’ ও ‘ওয়ান পিচ’ ড্রেস এর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই কমবেশী ‘গাউন’ ও ‘ওয়ান পিচ’ ড্রেসের অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। ‘গাউন’ ও ‘ওয়ান পিচ’ ড্রেসের মুজরি রাখা হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয়, ঝিনাইদহ শহরের বিক্রমপুর ক্লথ স্টোরের কাটিং মাস্টার আতিয়ার রহমান ও টপটেন টেইলার্সের কাটিং মাস্টার লিটন হোসেন এর সাথে তিনি জানালেন, প্রতিবছরের ন্যয় এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাদের অগ্রিম বেচাকেনা ও কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে তবে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তীব্র তাপদহে কাজ করতে একটু সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থা থাকলে বেচাকেনা আরও ভাল হবে বলে তারা আশাপ্রকাশ করেন। তাই ঈদের শেষ মুহুর্তে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে আমাদের। শতকর্মব্যস্ততার মাঝেও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নতুন পোশাক তৈরী করতে পেরে আমরাও খুশি ও আনান্দিত।
জেলা দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম-আহবায়ক ও এইচ এস এস সড়কের সাধারণ সম্পাদক এম রবিউল ইসলাম রবি জানান, জেলা শহরের টেইলার্সের ব্যবসায়ী, কাটিং মাস্টার ও শ্রমিকদের বিশেষ নিরপত্তার জন্য পুলিশের সাথে কথা বলে রাতে তাদের নির্ভয়ে বাড়িতে জাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা নিয়মিত তাদের খোঁজখবর রাখছি।