
স্টাফ রিপোর্টার:
তামাকের ব্যবহার কমাতে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি জরুরি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ১৫০ জন প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের এই চিকিৎসকরা এক যৌথ বিবৃতিতে তামাকের ভয়াবহতা এবং এর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা তুলে ধরেছেন।
বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই, অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, অধ্যাপক ডাঃ এ এম এম শরিফুল আলম এবং অধ্যাপক (ব্রি: জেনারেল) মোঃ কুদরত-ই-ইলাহী (অবঃ) সহ আরও অনেকে।
চিকিৎসকরা মতে, তামাক বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর অন্যতম। তামাক ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও শ্বাসকষ্টের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। বাংলাদেশে ২৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সের প্রায় অর্ধেক মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে এবং ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন, যা প্রত্যক্ষ ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর।
তাঁরা আরও উল্লেখ করেছেন, তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। এর ফলে প্রতি বছর বাংলাদেশে লক্ষাধিক মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি করে এর ব্যবহার কমানো জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে মাথাপিছু আয় বাড়লেও সিগারেটের দাম তেমন বাড়েনি, বরং এর প্রকৃত মূল্য কমে যাওয়ায় এটি আরও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। চলতি বছর সরকার সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করলেও নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম এখনও নাগালের মধ্যেই রয়েছে। বর্তমানে এই স্তরের সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৬ ও ৮ টাকা, যা ব্যবহার কমানোর জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ ৭৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারকারীই এই স্তরের ভোক্তা।
এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে তামাকের ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য সর্বনিম্ন ৯ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ফলে তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সিগারেট ব্যবহার কমবে এবং সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। একইসাথে প্রিমিয়াম সিগারেটের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিড়ির ক্ষেত্রে প্রতিটির সর্বনিম্ন মূল্য ১ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক এবং জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রেও দাম নির্ধারণ করে ৬০% সম্পূরক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, প্রস্তাবিত কর সংস্কার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কার্যকর করা হলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে কমে ১৩.০৩% এ নেমে আসবে। প্রায় ২৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছাড়তে এবং প্রায় ১৭ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ মানুষের অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
তামাকের ব্যবহার কমাতে করারোপ একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কার্যকর পদ্ধতি। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান কর কাঠামো সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলেও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা তাদের বিবৃতিতে জোর দিয়েছেন।