যশোর রেলওয়েতে কর্মরত শতাধিক কর্মচারীকে বিনা নোটিশে ছাঁটাই

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর: যশোর রেলওয়েতে কর্মরত পাকশি জোনে অস্থায়ী ভিত্তীতে শতাধিক কর্মচারীকে বিনা নোটিশে চাকরী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চাকরি করার পরও ঈদের আগে হঠাৎ করেই বেকার হয়ে পড়েছেন এসব কর্মচারীরা। ভুক্তভোগী কর্মচারীদের ঈদে তো বোনাস দেওয়া হচ্ছেই না উল্টো তিন মাসের বেতন ভাতা আটকে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অনেকের অভিযোগ কর্মচারীদের বেতন নিজেদের পকেটে ভরতে পায়তারা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা। ফলে, এবার ঈদে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ভুক্তভোগী এই শতাধিক পরিবার।

jessore railway newsসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যশোর জেলায় রেলওয়েতে অস্থায়ী ভিত্তীতে গেট কিপার ও ওয়েম্যান পদে কর্মরত শতাধিক কর্মচারীকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মচারীরা যশোর, নওয়াপাড়া, বেনাপোল, বসুন্দিয়া সহ বিভিন্ন রেল স্টেশনে গেট কিপার ও ওয়েম্যান পদে কর্মরত ছিলেন। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভিত্তীতে কর্মচারী-কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বাদ দিতে হলে নিয়ম অনুযায়ী তিন মাস আগে নোটিশ করে জানাতে হয়। অথচ নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঈদের আগে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে এসব কর্মচারীদের বেকার করা হয়েছে।

একদিন চাকরি স্থায়ী হবে এ ধরণের এক বুক আশা নিয়ে অস্থায়ী ভিত্তীতে চাকরিতে যোগদান করেছিলেন এসব কর্মচারীবৃন্দ। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন গেটে তারা কেউ কেউ ২০ বছর ২৫ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। চাকরি স্থায়ী হলে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে জীবনযাপন করা যাবে এ উদ্দেশ্যে নামমাত্র বেতনে তারা চাকরি করতেন। অথচ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতি যোগ্য সম্মান দেখিয়ে স্থায়ী করার পরিবর্তে স্থায়ীভাবে বিনা নোটিশে বাদ দিয়েছেন।

নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে এসব কর্মচারীরা রোববার যশোরে অবস্থিত রেলপথের উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।

প্রতিবাদ সভায় আলতাফ হোসেন জানান, তিনি ২৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাকে না জানিয়ে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার সাথে কর্তৃপক্ষ তিন মাসের বেতনও দিচ্ছে না। ঈদের জন্য ছেলেমেয়েদের পর্যন্ত কোন পোশাক কিনতে পারেন নি তিনি। ঈদে এবার খুব কষ্ট হবে।

মোসলেম উদ্দিন জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে গেট কিপারের দায়িত্বে আছেন। তাদের মত দক্ষ লোকদের প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর তাদের বিদায় দেওয়া হয়েছে। এই অমানবিক আচারণে তিনি ধিক্ষার জানিয়ে এবং দ্রুত চাকরিতে ফিরিয়ে এনে স্থায়ী করার দাবি করেন।

এছাড়া অনেকে অভিযোগ করেন, যাদের শিক্ষাগত কোন যোগ্যতা নেই এমন অনেককেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন দিয়ে মন্ত্রনালয়ে পাঠাচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে চাকরি করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন কর্মচারী হাফিজুর রহমান, রিপন শেখ, মিন্টু অধিকারী, নুর ইসলাম, সাগর দাস, রাজিব শেখ, ইলিয়াস ও এনামুল।

এ সব বিষয়ে যশোর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী বীরবর মন্ডল বলেন, মন্ত্রণালয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তী দিয়ে নতুন করে লোক নিয়োগ দিয়েছে। সেজন্য এসব কর্মচারীদের কোন রকম নোটিশ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিধি অনুযায়ী নিয়োগকৃত কর্মচারীদের এসব স্থানে যোগদান করানো হয়েছে। কর্মচারীদের বকেয়া বেতন এ সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করে দেওয়া হবে আশা করা যাচ্ছে। তারা চাকরি ফিরে না পেলেও বকেয়া বেতন পাবেন এটা শতভাগ নিশ্চিত। তাছাড়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এসব কর্মচারীদের প্রত্যয়ন পত্র দিয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হবে। স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা মন্ত্রণালয় তার সিদ্ধান্ত নেবে।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুব হাসান বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা অস্থায়ী কর্মচারীদের বাদ দিয়েছি। সেস্থলে দুই বছরের প্রকল্পে সরকার বিধি অনুযায়ী নতুন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন।