লন্ডনের বার্তা নিয়ে ঢাকায় ফখরুল, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আসছে কর্মসূচি

khalada fokrul
ফাইল ছবি

ডেস্ক রিপোর্ট: ঈদুল ফিতরের পর সরগরম হবে বিএনপির রাজনীতি। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়েই মাঠ গরম করতে চায় দলটি। নরম কর্মসূচির বদলে রাজপথে এবার শক্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ আন্দোলনকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা আছে তাদের।

লন্ডন থেকে তারেক রহমানের কাছ থেকে বিশেষ বার্তা নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি আগামী নির্বাচন নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসকে লক্ষ্য করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। এর আগে সারা দেশেই রাজপথে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ করা হবে। সেপ্টেম্বরের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে রাজপথে লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কথাও ভাবছে দলটি। এর আগেও মাঝেমধ্যে হরতাল কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। ঈদের পর বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চান দ্রুতই দল গুছিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে। সেই বার্তা নিয়েই দেশে ফিরেছেন বিএনপি মহাসচিব।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এখন রাজপথে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মুক্ত করতে হবে। কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের পর এ নিয়ে স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতারা আলোচনা করেই পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি ভারত সফর করে আসেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা। তারা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর। তারা বিজেপি ও কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠকের পর ভারতের ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বড় প্রতিবেশী ভারতের গঠনমূলক ভূমিকা চায় বিএনপি। কোনো একটি দলকে ভারত সহায়তা করুক, এটা চায় না। জানা যায়, দিল্লির সব পক্ষের নেতাদের থেকে বলা হয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হলে জামায়াতকে ছাড়তে হবে। দিল্লি সফর করা বিএনপির এক নেতা বলেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি তারা দিল্লিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। তারাও একমত হয়েছেন, বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেতে ক্ষমতাসীন সরকারকে একগুচ্ছ শর্ত দিয়েছে বিএনপি। এগুলোও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে দলটি। এর মধ্যে বিএনপির প্রধান লক্ষ্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবি নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ চায় দলটি। সেইসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মামলা প্রত্যাহারও চান তারা। নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়েন করতে হবে। তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিও তাদের। ২০০৮ সালের আগে নির্ধারিত সীমানায়ও নির্বাচন চায় দলটি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানান, সরকার যদি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে তাহলে বিএনপিও সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করবে। কিন্তু সরকার যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান ক্যাবিনেট রেখেই নির্বাচন করতে চায়, তাতে অংশ নেওয়া বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সব দলের সঙ্গেই সংলাপ করা জরুরি। কিন্তু সরকার যদি একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটে তাহলে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে সরেও আসতে পারে।

সূত্র জানায়, দাবি আদায়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগের পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। দাবি আদায়ে সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতেও সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে ২০ দল ছাড়াও সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে দলটি। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে লন্ডন থেকে তারেক রহমান সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গেই কথা বলছেন। যে কোনো মূল্যে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর ঐক্য চান দলের হাইকমান্ড।

ঈদের আগেই সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি দিতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের জেলা পর্যায়ের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এক মাসের মধ্যেই কেন্দ্র ও জেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোর কমিটিও শিগগিরই দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, রাজপথের আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এজন্য আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। নির্বাচন প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতেই বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের সাফ কথা, বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না।

বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাজপথের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন