আজ ব্রাজিলের দিকেই চোখ

brazilস্পোর্টস ডেস্ক: তাতারদের সেনা ছাউনি নয়তো এটা! মধ্যযুগে তাতার সেনাবাহিনীর দৌরাত্ম্যে কাঁপন ধরত সভ্য জগতের মানুষদের। সেই তাতারদের ছাউনিই যেন সামারা অ্যারিনা।

গেটটা দূর থেকে দেখা যায় না। গোলকধাঁধার মতো। ভলান্টিয়াররা হাতের ইশারায় দেখালেও বুঝতে কষ্ট হয়। গেট পেরিয়ে দুর্গের ভিতরে আসতেই থমকে যেতে হয়। ভিন্ন জগৎ থেকে ছুটে এসেছে কোনো ‘ইউএফও’! এই বুঝি বেরিয়ে এলো কোনো এলিয়েন! ইউএফও’র আদলে তৈরি করা হয়েছে সামারা অ্যারিনা। রাশিয়া বিশ্বকাপ এই একটা দিক থেকে দারুণ বৈচিত্র্যময়। একেকটা স্টেডিয়ামের বৈশিষ্ট্য একেক রকম। তাতার ঐতিহ্য আর মহাজাগতিক ইউএফও’র আধুনিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে তৈরি করা লড়াইয়ের ময়দানেই আজ মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল মেক্সিকো। নকআউট পর্বের প্রথম রাউন্ড থেকে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের বিদায়ের পর বেশ চাপে আছে ব্রাজিল সমর্থকরা।

এই চাপমুক্ত হতেই মাঠে নামবেন নেইমাররা। হেক্সা জয়ের মিশনে এগিয়ে যেতে আজ যে জিততেই হবে তিতের দলটাকে! পরীক্ষায় ফেল মারলেই বাড়ির পথ ধরতে হবে! ব্রাজিলের সামনে এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিশ্ববিখ্যাত দুই ফুটবলার মেসি ও রোনালদোর দল বিদায় নিয়েছে। নেইমার কী পারবেন সেই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে। ‘মেসি চাও, মেসি চাও’ (বিদায় মেসি, বিদায় মেসি)। গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার কাছে আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ার পর ব্রাজিলীয় সমর্থকরা এই সুর তুলেছিল বিশ্বকাপের শহরগুলোতে। কিন্তু নকআউট পর্বের প্রথম রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়ার পর সেই সুরটা আর শোনা গেল না। কেমন যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেছে ব্রাজিলও! আর্জেন্টিনার বিদায় ভয় ধরিয়ে দিয়েছে হলুদ জার্সিধারীদেরও! সামারাতে আর্জেন্টিনার প্রতি কটাক্ষ করে কেউ কিছু আর বলে না। ব্রাজিল সমর্থকরা নানা দিক থেকে এসে মিলে গেছে সামারায় মূল স্রোতের সঙ্গে। এই স্রোতটা আজ হবে সামারা অ্যারিনা অভিমুখী। তবে মেক্সিকান সমর্থকরাও কম নয় সংখ্যায়। তাদের বৈচিত্র্যময় পোশাক আর মোহনীয় অঙ্গ-ভঙ্গি মন কাড়ে অনেকেরই। রঙিন মেক্সিকানদের দিকে তাকিয়ে অনেক রাশানই তাদের পক্ষ নিয়েছে। গতকাল মেক্সিকানদের জন্যই বিশেষ একটা কার্নিভালের আয়োজন করেছিল সামারা। বর্ণিল এই কার্নিভালে মেক্সিকানরা তাদের সংস্কৃতি তুলে ধরেছে। সঙ্গে ছিল ব্রাজিল সমর্থকরাও। সাম্বা নাচের দেখা মিলেছিল এই কার্নিভালে। আর ছিল স্বাগতিক রাশানরা। কার্নিভালের এই আয়োজনটা যেন যুদ্ধের আগের সৈনিকদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই! আজ মাঠে নামবেন নেইমার, কটিনহো, পলিনহো, মার্সেলোরা। অন্যদিকে রাফায়েল মারকুয়েজ আর হার্নান্দেজরা। দুই দলের মধ্যে এই কার্নিভাল কতটা উন্মাদনা ছড়াতে পেরেছে বলা কঠিন। তবে নকআউট পর্বের এই ম্যাচ ঘিরে এরই মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছে অনেকটা। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের বিদায়ের পর ব্রাজিল এখন খুব সতর্ক। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল কোচ তিতেও করে গেলেন একই মন্তব্য। ‘মেক্সিকো খুব ভালো দল। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থেকেই ম্যাচটা খেলতে নামব। ’ অতীত পরিসংখ্যান একটা বড় বিষয়। বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এটা আরও সত্যি হয়ে উঠে। ব্রাজিল-মেক্সিকো লড়াই নতুন শতাব্দীতে এক ভিন্ন মাত্রাই পেয়েছে। ১৯৯৯ সালের পর দুই দলের ১৫ বারের লড়াইয়ে ৭ বারই জিতেছে মেক্সিকো। ব্রাজিল জিতেছে কেবল ৫ বার! অবশ্য দুই দলের মোট ৪০ বারের লড়াইয়ে ব্রাজিলের জয় ২৩টি। মেক্সিকোর জয় ১০টি। বিশ্বকাপে নিজেদের মধ্যে শেষ ম্যাচটা গোল শূন্য ড্র করেছিল ব্রাজিল-মেক্সিকো। দুটিই আমেরিকান দল। একটি ল্যাটিন, অপরটি উত্তর আমেরিকার। ব্রাজিল ছন্দে আছে। নেইমার দারুণ খেলছেন। কটিনহো নিয়মিতই গোল বানিয়ে দিচ্ছেন সতীর্থদের। বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত হলুদ জার্সিতে শৈল্পিক ফুটবল উপহার দিয়েছেন কটিনহোই। অবশ্য নেইমার ইনজুরি থেকে ফিরেও ভালোই করছেন। দিনে দিনেই তার উন্নতি চোখে পড়ছে। এবারের বিশ্বকাপে বেশিরভাগ দলই খেলছে অলআউট ফুটবল। আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স অলআউট খেলেছে বলেই তো ৭টা গোলের ম্যাচ নিয়ে উৎসব করেছে সমর্থকরা। ব্রাজিল-মেক্সিকোও তেমনই উৎসবমুখর হোক, এটাই সমর্থকদের কামনা। জয়-পরাজয় তো কাউকে না কাউকে মেনে নিতেই হবে!