উবার-পাঠাওয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে কী করবেন, ক্ষতিপূরণ কত?

pathao uberডেস্ক রিপোর্ট: শহরের প্রচলিত যাত্রীবাহনের পরিবর্তে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে মোটরসাইকেল ব্যবহার দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সফটওয়্যারনির্ভর হওয়ায় ভাড়া নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই বা সিন্ডিকেট করে যাত্রীকে জিম্মি করারও সুযোগ নেই।

রাইড শেয়ারিংয়ে প্রাইভেটকার পাওয়া গেলে এর মোটরসাইকেল সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দুর্ঘটনায় হতাহতের কারণে এই সেবা নিয়ে ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ঢাকায় রাইড শেয়ারিংয়ে চলাচলকারী সানজানা নওরিন প্রায়ই মোটরবাইক রাইডে অফিসে আসেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, কিছু কিছু বাইকের অবস্থা খুবই খারাপ থাকে। আবার রাইডার নিজেরা হেলমেট পরলেও আমাদের জন্য কোনো হেলমেট রাখে না। কেউ যদি রাখেও সেটার এমনই অবস্থা থাকে যে ওটা আর পড়ার মতো না। হেলমেট না থাকার কারণে ক্যান্টনমেন্ট রুটও ব্যবহার করতে পারি না আমি।

বৃহস্পতিবার এক রাইড অ্যাপ ব্যবহারকারী এয়ারপোর্ট রোডের কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। কয়েক দিন আগে এ সার্ভিস নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন সংগীতশিল্পী নাদেদজা সুলতানা আর্নিক।

তিনি চালকদের দক্ষতাসহ তাদের বেপরোয়া গতি এবং চালকদের অসচেতনতাকে দায়ী করেছিলেন।

মিজ আর্নিক বলেন, অনেকে কোনো রকম বাইক চালাতে পারলেই রাস্তায় নেমে যান। অনেক বেপরোয়াভাবে চালান। আস্তে যেতে বললেও লাভ হয় না। আমি অ্যাক্সিডেন্টের পর রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ করেছি। পরে তারা কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা জানি না।

রাইড ব্যবহারের এই বিরূপ অভিজ্ঞতার ব্যাপারে কোথায় জানাতে হবে, কীভাবে জানাতে হবে এমন বিষয়ে বেশির ভাগই কোনো ধারণা নেই।

এসব অ্যাপ ঘেঁটে যাত্রীদের অভিযোগ বা প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য কোনো হটলাইন নম্বর পাওয়া যায়নি। এজন্য যাত্রীরা সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের সমস্যা বুঝিয়ে বলার সুযোগ পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে পাঠাওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা নাফিউল ইসলাম বলেন, সার্ভিসটির ওয়েবসাইটে তাদের হেল্পলাইন নম্বর দেয়া হয়েছে।

যাত্রীদের নিরাপত্তায় তারা কী নীতিমালা মেনে চলছে জানতে চাইলে বলেন, চালকদের বৈধ লাইসেন্স, মোটরসাইকেলের ফিটনেস এবং এটি চালানো দক্ষতা পরীক্ষার ভিত্তিতে আমরা নিয়োগ দিয়ে থাকি। প্রত্যেককেই হেলমেট ব্যবহার করতে এবং যাত্রীকে হেলমেট সরবরাহ করতে বলা হয়। এছাড়া আমাদের বিশেষ টিম জিপিএস ট্র্যাকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে রাইডারদের নজরে রাখে।

তিনি বলেন, কোনো রাইডারের রেটিং বারবার খারাপ আসলে, কেউ পরপর তিন মাস যাত্রীকে হেলমেট না দিলে, আবার রাইডার যে মোটরসাইকেল দেখিয়ে নিবন্ধন করেছে সেটার পরিবর্তে অন্য কোনো মোটরবাইক ব্যবহার করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হয়।

তবে লাইসেন্স যাচাই-বাছাই যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এই রাইডগুলোকে একটি নীতিমালার আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যে লাইসেন্স ব্যবহার করে সেটা এসব অ্যাপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। কেননা এখানে অনেক পেশাদারি চালক আছেন। তাদের সেই বিশেষায়িত লাইসেন্সের প্রয়োজন। এছাড়াও চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সেগুলো খতিয়ে দেখাও প্রয়োজন এবং এই দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। সরকার-সংশ্লিষ্টদেরও উচিত বিষয়গুলো তদারকি করা।

তিনি বলেন, সবার আগে দেখে নিতে হবে অ্যাপে যে লাইসেন্স নম্বর দেখানো সেটা বাইকের সঙ্গে মিলছে কিনা। চালককে বাইরে থেকে দেখে বা কথা বলে বুঝতে হবে তিনি মোটরবাইক চালানোর অবস্থায় আছেন কিনা। বাইকের ফিটনেস ভালো না হলে এবং হেলমেট ছাড়া বাইকে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রয়োজনে চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করারও পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি চালক ও যাত্রীদের বিনা মূল্যে বিমা সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে উবার। তাদের বিমা নীতি অনুযায়ী, রাইড ব্যবহারের সময় যদি কোনো দুর্ঘটনায় উবার ব্যবহারকারী বা চালক মৃত্যুবরণ করেন, স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেন অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তাহলে তাদের এই ফ্রি বিমার সুবিধা দেয়া হবে।

এই সুবিধার আওতায় দুর্ঘটনায় উবার ব্যবহারকারীর মৃত্যু হলে ২ লাখ টাকা, স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেলে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

তবে এই বিমাসেবার ব্যাপারে পাঠাওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা প্রথম ১ হাজার চালককে বিমার আওতায় এনেছে। এছাড়া যাত্রী ও বাকি চালকদের এর আওতায় আনার কাজ চলছে।

এদিকে ব্যক্তিগত মোটরযান ভাড়ায় চালানোর বিষয়টিকে একটি বিধিমালার আওতায় আনতে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

এই নীতিমালাকে গ্রাহকরা ইতিবাচকভাবে দেখলেও এতে যেন সেবার সহজলভ্যতা এবং ভাড়ায় কোনো প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।