কোটা আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষকদের পদযাত্রা

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গ্রেফতার, সহিংসতা ও হয়রানির প্রতিবাদে পদযাত্রা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

dhaka newsরোববার বেলা ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ঢাবি ক্যাম্পাসে পদযাত্রাটি বের হয়। পদযাত্রাটি শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান।

সমাবেশে শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও অবিশ্বাস্য। এটি পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলে ঘটেনি।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। এ জন্য ছেলেমেয়ে, অভিভাবক, শিক্ষক সবাই এতে সমর্থন দিয়েছে। ৫৬ শতাংশ কোটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। আন্দোলন করেছে বলে সরকার কমিটি করতে বাধ্য হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কারে যারা আন্দোলন করেছে, তাদের ওপর নৃশংস-বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে এভাবে নৃশংস হামলা আগে দেখিনি। যে অবস্থা চলছে, তাতে মানুষের নিরাপত্তা নেই। যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে- এটি যৌক্তিক নয়।

অবিলম্বে কোটা সংস্কারের দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান এ শিক্ষাবিদ।

সমাবেশে আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আন্দোলন করার কারণে শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। মেয়েদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মিথ্যা হয়রানির মামলা করা হয়েছে। নানা অপবাদ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিবাদ করার অধিকার বন্ধ করা গণতন্ত্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। সব ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার চাই এবং হাতুড়িপেটাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চাই।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চেয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে গলা চেপে ধরার যে প্রবণতা তার নিন্দা জানাচ্ছি। হাসপাতাল থেকে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না করে বের করে দেয়ারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংবিধানে প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। সেটি সমুন্নত রাখার সুযোগ দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক আকমল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। জামায়াত–শিবির ও বিএনপির সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়েছে। এখন যে কোনো দাবি তুললেই এ রকম করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রদের দাবি প্রত্যাখ্যান করার ভাষা নিন্দনীয়। সরকারি হাসপাতাল থেকে শিক্ষার্থীদের যেভাবে বের করে দেয়া হয়েছে, তাতে বোঝা যায় গণতন্ত্র কোন অবস্থায় আছে।

বক্তব্য শেষে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।

তিনি বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব হামলাকারীর বিচার চাই। আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের নামে করা মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চাই। আক্রান্তদের চিকিৎসাব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। নারী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বিচার চাই এবং দ্রুত কোটা সংস্কারের প্রতিশ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে দিতে হবে।