‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল’

mojamel haqueঢাকা: সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে আদালতের আদেশ রয়েছে। এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ আদালত অবমাননার শামিল হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

বুধবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই অবগত আছেন যে বেশ কিছুদিন যাবত কোটা সংস্কার নিয়ে দেশে আন্দোলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার সংস্কারের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যৎ কোটা বিন্যাসের বিষয়ে কমিটি গঠন করেছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায় তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আদালতের আদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা কোটা থেকে পূরণ করার সুযোগ থাকলেও ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই এই আদেশ অগ্রাহ্য করে বা পাশ কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে ভিন্নতর কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। এটা করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে বলে আমি মনে করি।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সরকারের গঠিত কমিটি (কোটা পর্যালোচনা কমিটি) এ ব্যাপারে সচেতনতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি। এ বিষয়ে আদালতের রায়ের কপি আজ (বুধবার) কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যারা উদ্বিগ্ন তাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এই সরকার যেহেতু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তাই আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় হস্তক্ষেপ করা হবে না। মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না।’

তাহলে কি আপনি বলছেন মুক্তিযোদ্ধার ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে, এটা পরিবর্তন হবে না- এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। আদালতের নির্দেশ যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিবর্তন করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এর ব্যত্যয় ঘটার কোনো সুযোগ নেই।’

অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্য কোটা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা নেই। এটা ঠিক রেখে অন্যান্য কোটা তারা সংস্কার করবেন। তবে সরকার যদি (মুক্তিযোদ্ধা কোটা) পরিবর্তন করতে চায় তবে আদালতের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে হবে।’

সরকারের অংশ হয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা না করে সংবাদ সম্মেলন করার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা- জানতে চাইলে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘না, না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন। তিনি যা বলেছেন তা কার্যকরে যতক্ষণ পর্যন্ত উদ্যোগ নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কথা বলার সুযোগ নেই। আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের বিরোধিতা করছি না, আমি শুধু অবস্থাটা প্রধানমন্ত্রীকে জানাচ্ছি।’

‘প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি যে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কি? মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা তো আমরা নৈতিক দায়িত্ব। সেজন্য তাদের প্রশ্নের এক এক করে জবাব দিয়ে যাচ্ছি। এখন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের দৃষ্টি গোচর করার জন্যই সংবাদ সম্মেলন করলাম।’

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এ ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।

এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব।’

সর্বশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে, কমানো যাবে না’- বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজ আমরা স্বাধীন। তাদের অবদানেই তো আমরা দেশ পেয়েছি।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

কমিটি গত রোববার প্রথম সভা করেছে। সেই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কমিটি দেশ-বিদেশের কোটা সংক্রান্ত তথ্য, প্রতিবেদন সংগ্রহ করবে।