বিএনপি মহাসচিবের কাছে মহানগর উত্তরের ক্ষুব্ধ নেতাদের চিঠি

mirza fakhrul islamডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে ফের চিঠি দিয়েছে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ক্ষুব্ধ নেতারা। মহানগর উত্তর বিএনপির ঘোষিত থানা কমিটিগুলো স্থগিত করে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবিতে তারা এ চিঠি দিয়েছেন।

ঘোষিত কমিটি নিয়ে শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ অব্যাহত রাখায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে মহানগর উত্তরের সভাপতি এমএ কাইয়ুমের তরফে বহিষ্কারের ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগও করেছেন ক্ষুব্ধ নেতারা। গতকাল সকালে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু মহাসচিবের কাছে দেয়া মহানগর উত্তর বিএনপি নেতাদের চিঠিটি গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৩রা জুন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ২৬টি থানা ও ৫৮টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর অসন্তোষ দেখা দেয়। কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট মহানগর নেতাদের ৩২ জন একজোট হয়ে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানান।

পরবর্তীকালে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ৬ দফা বৈঠক ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ অবহিত করে দলীয়ভাবে তা সমাধানের অনুরোধ জানান। কিন্তু দীর্ঘ দেড় মাসেও দলের তরফে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না আসায় মহাসচিবের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো চিঠি দিয়েছেন মহানগর নেতারা।

চিঠিতে তারা মহাসচিবকে বলেন, বিগত ১৭ই জুন একটি চিঠির মাধ্যমে আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠনের ক্ষেত্রে যে নজিরবিহীন অনিয়ম হয়েছে তা সবিস্তারে জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি ও পর্যবেক্ষণগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরে দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোকে নতুন কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিলাম। চিঠিটি গ্রহণ করে সেদিন আপনি আমাদের কাছে এমএ কাইয়ুম ও আহসান উল্লাহ হাসান ঘোষিত কমিটিগুলোর সকল অভিযোগ ও অনিয়ম লিখিতভাবে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

নেতারা বলেন, আপনার নির্দেশনা মেনে আমরা থানাওয়ারি অভিযোগ ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তালিকা আপনার কাছে জমা দিয়েছি। অনিয়ম ও অভিযোগের তালিকাটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। ধৈর্য্যধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর আমরা সমাধানের আশায় ৬বার আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে চিঠি ও তালিকা হস্তান্তর করে প্রত্যেককে অনুরোধ করেছি, যেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্তসাপেক্ষে বিষয়টির একটি সুষ্ঠু সমাধান করে দেন।

নেতারা বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেননি। অনিয়ম-অভিযোগ তদন্তে কোনো কমিটিও করেননি। অন্যদিকে আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হওয়ার পরও দলীয় সব কর্মসূচিতে সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে আসছি। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকা অবস্থায় দলকে বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি দলীয় সমাধানের জন্য আপনাদের দারস্থ হয়ে আসছি। অন্যদিকে কমিটি গঠনের পর মহানগর উত্তর বিএনপি একটি আনুষ্ঠানিক মতবিনিময় সভাও করতে পারেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আমরাও কোনো সভা আহ্বান করিনি। যাতে এই বিশৃঙ্খল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আরও দ্বিধাবিভক্ত না হয়ে পড়ে।

চিঠিতে নেতারা বলেন, থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। বর্তমানে যা বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। আমাদের বিনীত অনুরোধ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই অচল ও অকার্যকর অবস্থার সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, আবুল হাশেম, মোস্তাফিজুর রহমান, নবী সোলায়মান, কাজী আলী ইমাম আসাদ, আলতাব উদ্দিন মোল্লা, আনোয়ার হোসেন, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, শামসুল হক মেম্বার, শাহীনুর আলম, যুগ্ম সম্পাদক শামীম পারভেজ, আতিকুর রহমান, গোলাম রাব্বানী, চেয়ারম্যান বেল্লাল হোসেন, নাসিরউদ্দিন, আশরাফ হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সোহেল রহমান, আক্তার হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জাহান জাহান, তারিকুল আলম তেনজিং, আলাউদ্দিন সরকার টিপু, হেলাল তালুকদার, ইকবাল হোসেন, হাফিজুর রহমান সাগীর, নূরুল হক, গিয়াসউদ্দিন দেওয়ান, ডিএম নজরুল ইসলাম, রেজাউর রহমান তপন, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ ও প্রকাশনা সম্পাদক মশিউর রহমান। সূত্র: মানবজমিন