সামর্থ্য থাকলে বিশ্বের এই নিদর্শনগুলো অবশ্যই দেখে আসুন

ফিচার ডেস্ক: ভ্রমণপিপাসু অনেকেই যাদের টাকা আছে তারা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক জায়গায় ভ্রমণ করে থাকেন। সারাবিশ্বে এমন কিছু জায়গা আছে যদি সামর্থ্য থাকে তবে মৃত্যুর আগে হলেও সেসব জায়গা একবার অন্তত দর্শন করা উচিত। এতে জীবন সার্থক হবে।

বিশ্বের এমনই কিছু জায়গা তুলে ধরা হলো-

মিশরের পিরামিড:

বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যজনক নিদর্শন এটি। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগের তৈরিকৃত এই নিদর্শনটির উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল আনুমানিক ১ লাখ যা সবচেয়ে বেশি মানুষের দ্বারা তৈরি নির্দশন এটি। দূর-দূরান্তের পাহাড় থেকে আনা বড় বড় পাথর দিয়ে পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল। পাথর খণ্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মতো।

স্টোনহেঞ্জ, ইংল্যান্ড:

স্টোনহেঞ্জ সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বের অব্যাখ্যাত এক রহস্য। এটি সম্ভবত ব্রিটেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এটি। ৫০০০ বছর আগের তৈরি স্থাপনাটি ২৫ টন পাথর দিয়ে তৈরি। এই পাথরের উপর সূর্যের কিরণ পড়ে অদ্ভূত এক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। দর্শনার্থীদের কাছে স্টোনহেঞ্জ অপার এক সৌন্দর্যের নাম।

১৯৮৬ সালে ইউনেসকো একে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

গ্রেট ওয়াল, চায়না:

২০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াঙের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই সবচেয়ে বিখ্যাত। চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এই প্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উচু এবং ৮৮৫২ কিলোমিটার লম্বা। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। এখানে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের মনোরম সৌন্দর‌্য উপভোগ করতে পারবেন।

ইয়োলো ন্যাশনাল পার্ক, যুক্তরাষ্ট্র:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় উদ্যান এটি। ১৮৭২ সালে এই উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইয়োমিং রাজ্যে অবস্থিত হলেও পরে মন্টানা ও ইডাহোতেও প্রসারিত হয়। ইয়োলোস্টোন বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান। এটি বন্যপ্রাণী ও বিভিন্ন প্রকার ভূতাপমাত্রাগত বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রসিদ্ধ।

তাজমহল, আগ্রা:

ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি এটি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

তাজমহলকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল।

বর্তমানে, প্রতিবছর তাজমহলে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে যার মধ্যে ২,০০,০০০ পর্যটক বিদেশি। এটি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

মাচুপিচু, পেরু:

মাচু পিক্‌চু অর্থাৎ ‘পুরানো চূড়া’ বা মাচু পিচু (স্পেনীয়: Machu Picchu মাচু পিচু) কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের আগের সময়কার একটি ইনকা শহর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৭,৮৭৫ ফিট। এটি পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার (Valle de Urubamba) ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত। মাচু পিচুই সম্ভবত ইনকা সভ্যতার সবচেয়ে পরিচিত। আন্ডিস পর্বতমালার চারদিকের জাঁকজমকপূর্ণ দৃশ্যের অবতারণা করে এই স্থাপনাটি।

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জিম্বাবুয়ে:

ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত মধ্য-দক্ষিণ আফ্রিকার জলপ্রপাত। এটি উচ্চতায় ১০৮.৩ মিটার এবং প্রস্থে ১,৭০৩ মিটার। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩৩,০০০ ঘনফুট (৯৩৫ ঘনমিটার) জল পতিত হয়। তবে নিম্ন নদী প্রবাহকালীন সময়ে পূর্বদিকের অংশ প্রায়শই শুষ্ক থাকে।

বর্তমানে এটি বহির্বিশ্বের পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে। জিম্বাবুয়ের ভিক্টোরিয়া ফলস ন্যাশনাল পার্ক এবং জাম্বিয়ার মোজি-ওয়া-তুনিয়া ন্যাশনাল পার্ক ব্যাপক এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। আশপাশের বনে অ্যান্টিলোপ, হাতি, জিরাফ, জেব্রা, সিংহ, চিতা ইত্যাদি প্রাণীর বসবাস। পাহাড়ের চূড়ায় বাজপাখি, ঈগল আবাস গড়েছে।