এমবাপ্পেকে হুমকি মানেন পেলে!

embapaস্পোর্টস ডেস্ক: গোটা ফুটবল বিশ্বে এখন কিলিয়ান এমবাপ্পে নামের এক তরুণের জয়জয়কার। মাত্র ১৯ বছর বয়সে রাশিয়া বিশ্বকাপ আলোকিত করেন এই উঠতি তারকা। ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে এমবাপ্পের অবদান অপরিসীম। গড়েন অনন্য একেকটি রেকর্ড। এ যেমন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের করা ৬০ বছর আগের রেকর্ডে নাম লেখান এমবাপ্পে। পেলের পর দ্বিতীয় কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোলের কীর্তি গড়েন এই প্রতিভাধর ফরোয়ার্ড।

এবারের আসরে পেলের দুইটি রেকর্ড ফিরিয়ে আনেন এমবাপ্পে। ফরাসি তরুণের খেলায় নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং ফুটবলের কালোমানিক পেলে।

বিশ্বকাপে পেলের কিছু রেকর্ড স্বমহিমায় টিকে আছে। এর মধ্যে অন্যতম তিনবার বিশ্বকাপ জয়। তবে এই বয়সে এমবাপ্পের প্রাপ্তি দেখে শঙ্কায় পড়ে গেছেন ৭৭ বছর বয়সী পেলে! রসিকতার সুরে এমবাপ্পেকে হুমকি দিয়ে বলেন এমবাপ্পে এভাবে খেলতে থাকলে নতুন কিছু রেকর্ড গড়তে হয়তো তাকে বুটজোড়া নিয়ে মাঠে নামতে হতে পারে। এমবাপ্পের খেলায় পেলে কতটা মুগ্ধ তা এই টুইট বার্তা দেখলেই বোঝা যায়। ‘এমবাপ্পে যদি এভাবে আমার রেকর্ড স্পর্শ করতে থাকে কে জানে আমাকে হয়তো বুট নিয়ে আবারো মাঠে ফিরতে হতে পারে…’। তার আগে প্রথম টুইটে এমবাপ্পেকে অভিনন্দন জানান পেলে, ‘মাত্র দ্বিতীয় কিশোর ফুটবলার হিসেবে ২০ বছরের নিচে কেউ বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করলো! এই অভিজাত ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম কিলিয়ান এমবাপ্পে। কারো সঙ্গ পাওয়াটা অসাধারণ!’

১৯৫৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারায় ব্রাজিল। ১৭ বছর ২৪৯ দিন বয়সে জোড়া গোল করে ইতিহাসের জন্ম দেন ব্রাজিলের কালোমানিক পেলে। এমবাপ্পে এমন কৃতিত্ব দেখালেন ১৯ বছর ২০৭ দিন বয়সে। ভবিষ্যতে এমবাপ্পে পেলের আরো রেকর্ড ছুঁতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে। কতটা পথ হাঁটতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আপাতত এই বয়সেই যা করেছেন তা অনেক তারকাই চোখে দেখেনি। গত বছরই ফ্রান্সের জাতীয় দলে অভিষেক হয় এই বিস্ময় বালকের। বিশ্বকাপ ফাইনালসহ ২২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে এমবাপ্পের গোল সংখ্যা ৮টি।

রাশিয়া বিশ্বকাপের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার ওঠে এমবাপ্পের হাতে। ৪ গোল নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করেন তিনি। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে এমবাপ্পের রেকর্ডময় রাতে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে ফ্রান্স। প্রথমবার ফাইনালে উঠে রূপকথার জন্ম দেয়া হলো না ক্রোয়াটদের। ব্লু’দের চতুর্থ গোলটি করেন এমবাপ্পে। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শটে বল জালে পাঠান তিনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার পেলের পাশে নাম লেখান এমবাপ্পে। বিশ্বকাপে কিশোর বয়সে পেলের পর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে জোড়া গোলের দৃষ্টান্ত দেখান প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) তারকা। শেষ ষোলো রাউন্ডে দুইবার আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান এমবাপ্পে। সাত গোলের থ্রিলারে ৪-৩ গোলে হার দেখে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অপর গোলটি আসে গ্রুপ পর্বে পেরুর বিপক্ষে। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে গোল না পেলেও গতির ঝড় তুলে উরুগুয়ে-বেলজিয়ামের ডিফেন্সে ভীতি ছড়ান এমবাপ্পে। সবচেয়ে কনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার রেকর্ড পেলের দখলেই থাকলো। এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে এমবাপ্পে। ১৮ বছর ২০১ দিন বয়সে ১৯৮২ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেন ইতালির ডিফেন্স তারকা জিউসেপ্পে বারগোমি। ফাইনালে বারগোমি গোল না পেলেও তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে ইতালিয়ানরা।

রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছেন না এমবাপ্পে
ক্লাব ফুটবলের আলোচিত নাম এমবাপ্পে। বিশ্বকাপ জেতার মধ্য দিয়ে এই বিস্ময়-বালক এখন আরো প্রস্ফুটিত। গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে আবারো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে গত বছর মোনাকে ছেড়ে পিএসজি আসা এমবাপ্পে। সম্প্রতি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুভেন্টাসে চলে যাওয়ায় তার যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজছে রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ জায়ান্টদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে শোনা যাচ্ছে এমবাপ্পে, নেইমার ও ইডেন হ্যাজার্ডের নাম। তবে রিয়ালের আশায় গুড়েবালি। ক্লাব বদলানোর কোনো ইচ্ছা নেই বিশ্বকাপ জয়ী এমবাপ্পের। তিনি বলেন, ‘আমি পিএসজির সঙ্গেই থাকবো। এই ক্লাবে আমার পথচলা অব্যাহত রাখতে চাই। আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে মাত্র।’